ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রাশিয়ার পাওনা পরিশোধের জট অবশেষে খুলতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সাময়িক ছাড় ও লাইসেন্সিং পদ্ধতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে রাশিয়া কীভাবে অর্থ নিতে চায়, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও কার্যক্রম শুরু করেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী জানিয়েছেন, রাশিয়ার পাওনা পরিশোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ডিসেম্বর পর্যন্ত শিথিলতা দিয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে ২০২২ সাল থেকে রূপপুর প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ আটকে যায়। তবে সম্প্রতি জারি করা এক নির্বাহী আদেশে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাশিয়ার প্রতি দায় পরিশোধের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট’ সোনালী ব্যাংকে কয়েকটি বৈদেশিক মুদ্রা (এফসি) অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের প্রস্তাব, বাংলাদেশ সেখানে অর্থ জমা দেবে এবং তারা সেখান থেকে রাশিয়ায় স্থানান্তর করবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত সম্ভব নাও হতে পারে, কারণ আন্তর্জাতিক লেনদেনের একমাত্র বার্তা ব্যবস্থা সুইফ্ট যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বাইরে যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ‘স্ক্রো অ্যাকাউন্টে’ জমা হয়েছে ১০৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যয়ে ১৮ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এখনও প্রায় ৮৫ কোটি ডলার পরিশোধের অপেক্ষায় রয়েছে।
২০১৬ সালের জুলাই মাসে রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করে। মোট ব্যয়ের ৯০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে রাশিয়া। বাকি ১০ শতাংশ পরিশোধ করছে বাংলাদেশ। মূল ঋণ শোধ শুরু হওয়ার কথা ২০২৭ সালে, তবে বাংলাদেশ ২০২৯ সাল পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড চেয়েছে। পাশাপাশি ২০২৩ সাল থেকে সুদ ও পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে।
অতীতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘পিপলস ব্যাংক অব চায়না’র মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের চেষ্টা হয়েছিল। এমনকি চীনের ‘ক্রসবর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম’ (সিআইপিএস)-এ যুক্ত হওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ওপর নির্ভরশীলতা থাকায় শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি সরকার।