ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কন্ঠ
ভয়ঙ্কর অপরাধ জগতের কুখ্যাত নাম কেটু মিজান। দিনের পর দিন হয়ে উঠেছেন আরও হিংস্র। গ্রেপ্তারের পরও তাঁর ঔদ্ধত্য কমেনি একটুও। গতকাল শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে পুলিশের কড়া পাহারায় পিছমোড়া হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় আদালতে নেওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে মিজান বলেন, “আপনারা নাটক-সিনেমা-ছবি করেন, আমি করি রিয়েল।”
গাজীপুরের সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যার পরও মিজানের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। বরং আদালতে নেওয়ার সময় চোখ রাঙিয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার সিঁড়িঘাট মিলন বাজার এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে মিজান গাজীপুরে এসে গড়ে তোলেন একটি ভয়ঙ্কর অপরাধ সাম্রাজ্য, যার দ্বিতীয় নেতা ছিলেন তাঁর স্ত্রী পারুল আক্তার গোলাপী।
মেলান্দহ থেকে প্রায় তিন দশক আগে পরিবারসহ রংপুরে চলে যান মিজান। পরবর্তীতে গোলাপীকে বিয়ে করে গাজীপুরে এসে শুরু করেন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। দম্পতি মিলে গাজীপুরের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ‘হানিট্র্যাপ’ ও ছিনতাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রতিদিন লাখো মানুষের যাতায়াত হয় এই এলাকায়, যেখানে গোলাপী যুবকদের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নিতেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুরের বাদশা মিয়াকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতানোর চেষ্টা করে গোলাপী। স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলার পর প্রলুব্ধ করার চেষ্টা ব্যর্থ হলে বাদশা গোলাপীকে ঘুষি মারেন। সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে ওত পেতে থাকা মিজান চক্রের সদস্যরা চাপাতি দিয়ে বাদশাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে।
এই ঘটনা ভিডিও করছিলেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন। দুর্বৃত্তরা বিষয়টি বুঝে গিয়ে তুহিনকে ধাওয়া করে, একটি চা স্টল থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।
পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেটু মিজান, তাঁর স্ত্রী গোলাপী, মো. স্বাধীন (পাবনা), আল আমিন (খুলনা), শাহ জালাল (কুমিল্লা), ফয়সাল হাসান (পাবনা), সাব্বির সুমন (শেরপুর) ও শহীদুল ইসলাম (ত্রিশাল) গ্রেপ্তার হয়। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, মাদক ও ছিনতাইসহ মোট ২৯টি মামলা রয়েছে। শুধু মিজানই ১৫টি মামলার আসামি।
কিশোরগঞ্জের ইটনা বাজার থেকে শহীদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৪, পরে র্যাব-১ এর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে। তিনি স্বীকার করেন, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় এ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ব্যর্থতা রয়েছে।
বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, তুহিন হত্যায় দুটি মামলা হয়েছে—একটি নিহত সাংবাদিকের ভাইয়ের, অন্যটি বাদশা মিয়ার ভাইয়ের দায়ের করা। আদালত গ্রেপ্তার সাতজনের প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
তুহিন হত্যার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। ফরিদপুর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, নড়াইল, নাটোর, লালমনিরহাট, পিরোজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামসহ বহু স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের নৃশংসতা শুধু একজন সাংবাদিকের প্রাণ কেড়ে নেয়নি, বরং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছে।