ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জোটের প্রধান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে গণভবনের ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। তাঁদের মাধ্যমেই জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানানো হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৪ দলের এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত–শিবির গোষ্ঠীর অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামাত–শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।’
১৯ জুলাই রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের সর্বশেষ বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১০ দিনের মাথায় আজ আবার জোটের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। সেখানেই জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আগেই জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন।
গণভবনে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, তার পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। এ বিষয়ে তাঁর কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন রয়েছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তাঁরাই এসব অপকর্ম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হলে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বৈঠকে এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তৃতা দেন। প্রথমেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ দরকার। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের বিষয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ই উঠেছিল। তখন করা হয়নি। এখন বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরাসরিই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। তাদের নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি এই বিষয়ে জনমত গঠনে রাজপথে মিছিল-সমাবেশ করারও প্রস্তাব দেন।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দেন। পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করার ওপর জোর দেন। এ জন্য আস্তে আস্তে মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দিয়ে পরীক্ষা শুরুর কথা বলেন তিনি।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী উল্লেখ করেন যে, তিনি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য মামলা করেছিলেন। তিনি জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জোরালো দাবি জানান।
শেষের দিকে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে সভার সমাপনী টানার কথা বলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই করা উচিত।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সভার সমাপনী টানতে গিয়ে বলেন, ১৪ দলের নেতাদের সুপারিশ থেকে এটা স্পষ্ট যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং দেশে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা দরকার। ১৪ দলের নেতাদের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি একমত।
সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী এও জানান যে, আগামী বুধবারের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করবে সরকার।