সকলের কণ্ঠ | ডেস্ক রিপোর্ট
৭ আগস্ট ২০২৫, বুধবার
কলকাতা: বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা জটিলতার প্রভাব পড়েছে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়িক পরিবেশে। দীর্ঘ সময় ধরে এই অঞ্চলের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশ থেকে আগত পর্যটকদের ওপর। কিন্তু ভিসা কড়াকড়ির কারণে পর্যটকের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দেয়। চালু রাখে শুধু বিশেষ ক্যাটাগরির ভিসা, তাও সীমিত আকারে। এমনকি মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অতিরিক্ত ভিসা আবেদন ও লোকবল সংকট এর পেছনে মূল কারণ।
ভিসা বন্ধের ফলে ধাক্কা খায় নিউমার্কেট কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে বাংলাদেশি পর্যটকদের আনাগোনা। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত কিছু পর্যটকের দেখা মিললেও এরপর থেকে চিত্র আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে নিউমার্কেট। অনেক দোকান মালিক ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। হোটেল, ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে রোগী সংখ্যা কমে যায় ব্যাপকভাবে।
একজন স্থানীয় দোকানদার বলেন, “নিউমার্কেট তো বাংলাদেশি পর্যটকরাই চালাতেন। এখন তাদের দেখা মেলে না বললেই চলে। ব্যবসা চলছে লোকসানে।”
তবে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটক ভিসা না থাকলেও শিক্ষাগত, চিকিৎসা ও ব্যবসায়িক ভিসার ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা এসেছে। এতে করে ধীরে ধীরে নিউমার্কেটের চিত্র আবারও পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে হাতে গোনা কিছু বাংলাদেশি পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। যদিও সংখ্যাটা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
এক বাংলাদেশি পর্যটক জানান, “আগে বছরে দুই-তিনবার আসতাম কলকাতায়। এখন নিয়মের কড়াকড়ির কারণে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
ব্যবসায়ী মহল এবং ভ্রমণপ্রেমীরা মনে করছেন, দুই দেশের স্বার্থেই ট্যুরিস্ট ভিসার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা জরুরি। এতে করে শুধু নিউমার্কেটই নয়, কলকাতার সামগ্রিক অর্থনীতিও লাভবান হবে। বিশেষ করে চিকিৎসা এবং শপিংয়ের জন্য আসা বাংলাদেশিদের সুবিধা নিশ্চিত হবে।
এক হোটেল ব্যবস্থাপক বলেন, “যদি দ্রুত ভিসা সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে আমাদের মতো ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো টিকতে পারবে না।”
কলকাতার নিউমার্কেট শুধু কেনাকাটা কিংবা খাবারের জন্য নয়, অনেক বাংলাদেশির চিকিৎসা ও স্বল্প ব্যয়ে ভ্রমণের প্রধান গন্তব্য। তাই বন্ধ থাকা পর্যটক ভিসা নীতি দুই দেশের অর্থনীতি ও মানবিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সময় এসেছে এ বিষয়ে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কারণ, স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রম চালু হলে লাভবান হবে দুই দেশই।