ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিকৃত পণ্যে শুল্ক ছাড় পেতে এখন বাংলাদেশের সামনে বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে জানানো হয়, যদি কোনো রপ্তানি পণ্যে ন্যূনতম ২০ শতাংশ মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেই পণ্যের মার্কিন কাঁচামাল অংশের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে না।
বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে রপ্তানিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে রাখবে। কারণ, বাংলাদেশের পোশাক উৎপাদন কাঠামো এখনও তুলানির্ভর। মোট রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ পণ্যই তুলা থেকে তৈরি সুতায় উৎপাদিত হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের বার্ষিক তুলার চাহিদা প্রায় ৫০০ কোটি ডলার হলেও, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয় মাত্র ২৫ কোটি ডলারের তুলা। অর্থাৎ আমদানি বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে প্রায় ২০ গুণ। তুলা আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা বাড়ালে রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ছাড় সুবিধা গ্রহণ করা সহজ হবে।
অন্যদিকে, প্রতিযোগী দেশ চীন, ভারত ও পাকিস্তান নিজেরাই তুলা উৎপাদন করে। ফলে তারা মার্কিন কাঁচামাল ব্যবহার না করেই রপ্তানি করে থাকে, যা তাদের জন্য এই সুবিধা সীমিত করে দেয়।
বস্ত্রকল ও কম্পোজিট পোশাক কারখানাগুলো তুলার প্রধান ব্যবহারকারী। তুলা আমদানির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও গুণগত দিক থেকে এগিয়ে। বিটিএমএ’র (বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন) তথ্য মতে, মার্কিন তুলায় উৎপাদন পর্যায়ে অপচয় মাত্র ৫–১০ শতাংশ, যেখানে ভারতীয় তুলায় তা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
বিটিএমএর পরিচালক আলম খোরশেদ জানান, কারখানাগুলো যদি সম্পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারে, তাহলে বছরে ৬০০ কোটি ডলারের তুলার চাহিদা তৈরি হবে। তবে ভারত থেকে আসা বৈধ-অবৈধ সুতা ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ইতোমধ্যেই এই শুল্ক ছাড় সুবিধা কার্যকরের পথ খুঁজছে। সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, “আমাদের ৭৫ শতাংশ পণ্যই তুলানির্ভর। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবহার করে আমরা এই সুবিধা নিতে পারি। প্রতিযোগী দেশগুলো নিজেদের তুলায় কাজ করে, তাই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কাস্টমস ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে বিজিএমইএ।
র্যাপিড চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয় যে শুল্ক ছাড়ের প্রক্রিয়া কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। আমদানির সময় ও খরচ কিছুটা বেশি হলেও, ২০ শতাংশ শুল্ক ছাড়ের তুলনায় তা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি বাস্তবে সুবিধাটি কার্যকর হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু তুলা নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক্সেসরিজ, পলিয়েস্টার, লাইয়োসেল ও ভিসকস ফাইবার আমদানির সুযোগও আছে। বর্তমানে এসব পণ্যের বার্ষিক আমদানি প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কোটি ডলারের মধ্যে হলেও, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা আনার সুযোগ কার্যকরভাবে কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে।