ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
দেশের অন্যতম অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো গ্রাহক ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি পড়েছে বিপাকে। গত শনিবার (২ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন রাশিদ শাহ সাঈম দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে কোটি টাকার জালিয়াতির চিত্র।
‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এ অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ও সাধারণ গ্রাহকরা লক্ষ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭টি এজেন্সি প্রায় ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ক্ষতির তথ্য জানিয়েছে।
ঢাকার মতিঝিল থানায় এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক বিপুল সরকার পাঁচজনকে আসামি করে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেন। এর ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে—
- সাকিব হোসেন, হেড অব ফিন্যান্স
- এ কে এম সাদাত হোসেন, চিফ অপারেটিং অফিসার
- সাঈদ আহমেদ, চিফ কমার্শিয়াল অফিসার
গ্রেপ্তারের বাইরে রয়েছেন মূল হোতা সালমান বিন রাশিদ শাহ সাঈম ও তার বাবা এম এ রাশিদ।
এটাই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি (ওটিএ) গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে পালিয়েছে:
- হালট্রিপ (২০২০): চেয়ারম্যান পি কে হালদার; হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ
- ২৪টিকিট.কম (২০২১): গ্রাহক ও ৬৭ এজেন্টের ৪.৪৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ
- লেটস ফ্লাই (২০২৩): ৩৮টি এজেন্সির ১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও
ওটিএ খাতে সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা না থাকায় প্রতারণা বারবার ঘটছে। শুধুমাত্র লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এ নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) বহুদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের জন্য।
আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন:
“আমরা ৭% কমিশনে টিকিট পাই। অথচ ওটিএরা ১৫–৩০% ছাড়ে বিক্রি করে। এটা অবাস্তব—আর এর আড়ালে চলছে জালিয়াতি।”
টিকিট বুকিং খাতে এমন অনিয়ম যাত্রীদের আস্থাহীনতা ও ক্ষতির আশঙ্কা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছে খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন:
“এভাবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে পুরো খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি ড. সাফিকুর রহমান জানান, ফ্লাইট এক্সপার্টের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা IATA-র কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
ওটিএ খাতের জালিয়াতি রোধে দ্রুত আইনি কাঠামো ও কেন্দ্রীয় তদারকি ব্যবস্থা চালু না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে এই খাত—এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাভেল ও পর্যটন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন অনুবিভাগের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব এ কে এম মনিরুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি