ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে চলমান ঐকমত্য ভিত্তিক সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ২০টি মৌলিক সংস্কারের মধ্যে ১১টি সিদ্ধান্তে পূর্ণ ঐকমত্য হলেও ৯টি বিষয়ে রয়েছে মতানৈক্য ও আপত্তি। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও নবগঠিত জাতীয় কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি)সহ কয়েকটি দল একাধিক সিদ্ধান্তে সরাসরি রাজি হয়নি অথবা ভিন্নমত জানিয়েছে।
সংলাপে বিএনপি চারটি সিদ্ধান্তে সম্মত নয়। আরও তিনটিতে তারা নোট অব ডিসেন্টসহ একমত। জামায়াতে ইসলামী একটি সিদ্ধান্তে সরাসরি রাজি হয়নি এবং তিনটিতে আপত্তি জানিয়েছে। অন্যদিকে এনসিপি ১৮টি সিদ্ধান্তে একমত হলেও নারীর প্রার্থিতার বিষয়ে ভিন্নমত দিয়ে ১৫ শতাংশ সরাসরি মনোনয়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়াও সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদসহ কিছু দল সংবিধানের মূলনীতিতে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’ অন্তর্ভুক্তিতে রাজি হয়নি। তারা বলছে, এটি প্রচলিত মতাদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের ক্ষমতা এবং প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্ব খর্ব সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো। জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ২১টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে থাকলেও বিএনপিসহ পাঁচটি দল এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার উচ্চকক্ষে দিলে দেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে।”
❖ বিএনপির আপত্তিকৃত সিদ্ধান্তসমূহ
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন
প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা নিষিদ্ধ
দুদক, পিএসসি, সিএজি ও ন্যায়পাল নিয়োগে সাংবিধানিক কমিটি
র্যাঙ্ক চয়েজ ভোটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগ
৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কারে বিএনপি চায় আস্থা ভোট, সংবিধান সংশোধন ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এছাড়া প্রধান বিচারপতির নিয়োগে তারা চায়, রাষ্ট্রপতি জ্যেষ্ঠতম দুই বিচারকের মধ্যে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে পারবেন।
❖ জামায়াতের আপত্তি ও প্রস্তাব
জামায়াত সরাসরি নির্বাচনে নারীদের প্রার্থী করার বাধ্যবাধকতা মানতে নারাজ। তারা চায় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হোক, তবে তা নির্ধারিত হোক পিআর পদ্ধতিতে। এছাড়াও তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী দলীয় প্রধান হতে পারবেন না, তবে সংসদ নেতা হতে পারবেন।
❖ এনসিপির প্রস্তাবনা
এনসিপি নারী প্রতিনিধিত্ব ৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পক্ষে। তারা বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগে র্যাঙ্ক চয়েজ ভোট না হলে ক্ষমতাসীন দল সুবিধা নিতে পারে।
❖ অন্যান্য দলের ভিন্নমত
সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ সংবিধানের মূলনীতিতে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ অন্তর্ভুক্ত করার বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে এলডিপি, লেবার পার্টি, ১২ দলীয় জোটসহ একাধিক দল জামায়াত ও বিএনপির অবস্থানকেই সমর্থন করেছে।
❖ যেসব সিদ্ধান্তে সর্বসম্মতি
১. একজন ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না
২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন
৩. জরুরি অবস্থায় বিরোধীদলীয় নেতার পরামর্শ
৪. মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ
৫. সাংবিধানিক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন
৬. আসন সীমানা নির্ধারণে সাংবিধানিক কমিটি
৭. সংবিধানের ৮, ৪৮, ৫৬, ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোট
৮. গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
৯. রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা আইন দ্বারা সীমিত করা
১০. বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ ও বিভাগীয় হাইকোর্ট বেঞ্চ
১১. উপজেলায় আদালত স্থাপন
❖ সনদ চূড়ান্তের অপেক্ষা
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দু’একদিনের মধ্যেই ‘জুলাই সনদের’ চূড়ান্ত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হবে। সনদে বিস্তারিতভাবে বলা থাকবে কোন সিদ্ধান্তে দলগুলো একমত হয়েছে এবং কোন সিদ্ধান্তে আপত্তি রয়েছে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে রাজনৈতিক দলগুলো সই করবে এবং আগামী নির্বাচনের পর গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে।
তবে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্তত ১৫টি দল বলেছে, সনদের আইনি ভিত্তি না থাকলে তারা সই করবে না এবং নির্বাচনের আগেই বর্তমান সরকারের অধীনে সংস্কার কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে।