ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে দৃশ্যত বড় ধরনের পালাবদল ঘটছে। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে তিনি যেমন দিল্লিকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলেছেন, তেমনি কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পাকিস্তানের সঙ্গে এক বিরাট জ্বালানি সমঝোতার কথা জানিয়ে দিলেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে লেখেন, “পাকিস্তানের বিপুল খনিজ তেলের রিজার্ভকে কাজে লাগাতে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্যের হাত বাড়াবে। কে জানে, একদিন হয়তো পাকিস্তান ভারতে তেল রপ্তানিও করবে!”
বিবিসির খবরে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে পাকিস্তানকে ‘মিথ্যা ও প্রতারণার দেশ’ হিসেবে অভিহিত করা ট্রাম্প এবার ইসলামাবাদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছেন। তার নেতৃত্বে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও সামরিক ঘনিষ্ঠতা নাটকীয়ভাবে বাড়ছে। জ্বালানি চুক্তির পাশাপাশি সামরিক সম্মান এবং উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলোর মাধ্যমে এই সম্পর্ক এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (USCENTCOM) প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলাকে পাকিস্তান তাদের অন্যতম শীর্ষ সামরিক সম্মান ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজে’ ভূষিত করেছে। শান্তির প্রসারে এবং সামরিক সহযোগিতায় অবদানের জন্য তাকে এই খেতাব প্রদান করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি।
এর আগেই কুরিলা পাকিস্তানকে ‘ফেনোমেনাল পার্টনার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সেনা প্রধানদের আমন্ত্রণ ও ব্যবসায়িক সংযোগ
এর চেয়েও বড় বার্তা ছিল, যখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন। যদিও এই বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশ পায়নি, তবু জানা গেছে—পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায়ই মূলত এই বৈঠক আয়োজন করা হয়।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর প্রধানও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করে পেন্টাগন ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। লক্ষ্য ছিল সামরিক সরঞ্জাম কেনার পথে অগ্রগতি।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অংশীদারিত্ব ও ট্রাম্প পরিবারের লাভ
তবে এই ঘনিষ্ঠতার পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক ও পারিবারিক স্বার্থও। পাকিস্তান সম্প্রতি ট্রাম্প পরিবারের মালিকানাধীন ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিনান্সিয়াল’-এর সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে অংশীদারিত্বে যেতে সম্মত হয়েছে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটিই ট্রাম্পের মনোভাব পরিবর্তনের বড় কারণ।
ট্রাম্পের ‘মধ্যস্থতা’ ও যুদ্ধবিরতির দাবি
ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির দাবি আরও একটি কূটনৈতিক দৃষ্টান্ত তৈরি করে। যদিও ভারত এ দাবি মানতে রাজি নয়, পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের প্রশংসা করেছে। এর ফলে ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে—এই নতুন সমীকরণে ভারতের জন্য কী বিপদ তৈরি হচ্ছে?
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ‘কোয়াড’ জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে সেই ভূমিকা এখন অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। ট্রাম্প সরাসরি চীনের সঙ্গে ডিল করতে চান, আর ভারতকে এক্ষেত্রে মাঝপথে রাখতে চান না।
এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাড়তি শুল্ক, জরিমানা এবং কূটনৈতিক উপেক্ষা দেখা যাচ্ছে। এশিয়া প্যাসিফিকে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সামরিক ও বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।