ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠপ্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, রাত ১০:৩০
রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কিছুদিন পরই হঠাৎ করে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই সহোদর—সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। এই ঘটনায় হতবাক তাদের পরিবার ও রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, কয়েক মাস আগেও তারা টিউশন করে নিজেদের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, নাটোরের গোপালপুরে তাদের আদি বাড়ি হলেও বর্তমানে পরিবারসহ রাজশাহীর কেচুয়াতৈল এলাকায় বসবাস করেন তারা। তাদের বাবা এসএম কবিরুজ্জামান একজন গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী। স্বল্প আয়ের এই পরিবারের বড় ভরসাই ছিল দুই ছেলের উপার্জন ও শিক্ষাজীবন।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাত ৮টার দিকে রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির চেষ্টার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। গুলশান থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান জানান, অভিযুক্তরা নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গিয়ে এক কোটি টাকা দাবি করেন। আগেই তারা ১০ লাখ টাকা আদায় করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শনিবার তারা বাকি টাকা আনতে গেলে পুলিশ তাদের আটক করে।
আটক পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন দুই ভাই সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। তাদের গ্রেপ্তারের খবরে পুরো এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা বলছেন, ছেলেরা অত্যন্ত ভদ্র, ধর্মপরায়ণ এবং নিয়মিত নামাজ পড়তেন। এমন ঘটনায় তারা বিস্মিত।
ফিলিং স্টেশনে কাজ করতে করতে কথা বলেন তাদের বাবা এসএম কবিরুজ্জামান। কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসা গলায় তিনি বলেন, “ছেলেরা আগে টিউশন করে সংসার চালাত। এখন তো আয় নেই বললেই চলে। ফিলিং স্টেশনের বেতনে কেবল বাসা ভাড়া হয়। ওদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খাই। কেউ কিছু দিলে, সেটাতেই চলি। এখন শুনি ছেলেরা চাঁদাবাজি করেছে! বিশ্বাসই করতে পারছি না।”
তিনি আরও জানান, রাজনীতির সঙ্গে জড়ানোর পর থেকেই ছেলেদের জীবনযাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। তবে তিনি কখনও ভাবেননি এমন অপরাধে গ্রেপ্তার হবেন তার সন্তানরা।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আরও রয়েছেন—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। সিয়াম ও সাদাবের সঙ্গে রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে ফেসবুক সূত্রে জানা গেছে।
চাঁদাবাজির মামলার পর সংগঠন থেকে পাঁচজনকেই বহিষ্কার করা হয়েছে।
রাজশাহীর খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন সিয়াম ও সাদাব। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এনসিপি রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান মোবাশ্বের আলী বলেন, “ওরা তো আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিল। অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র। ওদের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর শুনে আমি হতবাক।”
চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে চারজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অংশ কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।