ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
সারা দেশে হঠাৎ করেই জ্বর, সর্দি-কাশিসহ ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে মৌসুমি জ্বর। চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। একই উপসর্গ থাকায় রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকরাও পড়ছেন বিপাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমে ঘরে বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি পান, মাস্ক পরা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। হালকা উপসর্গ থাকলে হাসপাতালের ভিড় না বাড়িয়ে ঘরেই চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ঢাকা মেডিকেলে রোগীর চাপ বেড়েছে ১৩ শতাংশের বেশি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তথ্য বলছে, চলতি জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে মেডিসিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭,১৮৪ জন। কিন্তু পরবর্তী ১২ দিনে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮,২৭৪-তে। অর্থাৎ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১,২০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফারুক আহাম্মদ। তিনি বলেন, “এদের বড় অংশই ভাইরাল জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। অনেকেরই রয়েছে দুর্বলতা, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ।”
ঢামেকের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ডা. মাসুমা মন্নী জানান, পরীক্ষার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ভাইরাস পরীক্ষার কিটে সংকট দেখা দিয়েছে। তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষাও।
ঢামেকের ওষুধ স্টোরের তথ্যানুসারে, হিস্টাসিনের চাহিদা গত মাসের তুলনায় বেড়েছে ২০০.৩৩%। জুনে বিতরণ হয়েছিল ৬ হাজার পিস, জুলাইয়ে তা দাঁড়ায় ২০ হাজারে। প্যারাসিটামলের চাহিদাও বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।
স্টোর ইনচার্জ ডা. মেজবাউল হক জানান, “ওষুধের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন পর্যন্ত সংকট তৈরি হয়নি। নিয়মিত সরবরাহ বজায় রাখা হচ্ছে।”
মুগদা মেডিকেলেও একই অবস্থা, ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ১৩.৭০% বেড়েছে
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালের ১১ তলায় ডেঙ্গু ইউনিটে ৩৪ জন, শিশুবিভাগে আরও ১১ জন রোগী চিকিৎসাধীন। ১ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে এখানে ভর্তি হয়েছেন ১,৫৪৫ জন, যা আগের ১৪ দিনের তুলনায় ১৩.৭০% বেশি।
ওষুধের দিক থেকেও মুগদা মেডিকেলে বেড়েছে চাহিদা। জুলাইয়ে প্যারাসিটামল বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ পিস, যা জুনের তুলনায় ২৬.৫০% বেশি।
ঢামেকের বহির্বিভাগে দেখা যায়, মেডিসিন, শিশু, চর্ম ও নাক-কান-গলা বিভাগে রোগীর লম্বা লাইন। অনেকেই সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও ডাক পাননি।
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা শাহীনুর আক্তার বলেন, “আমার ছেলে চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। সাতটায় এসেছি, এখনো সিরিয়াল পাইনি।”
গার্মেন্টকর্মী সালমা খাতুন বলেন, “আমি ও মেয়ে জ্বর নিয়ে এসেছি। জায়গা না থাকায় বাইরে বসে আছি। কিছু ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে বলেছে।”
আরেকজন রোগী ফারুক হোসেন জানান, “স্ত্রীর জন্য ওষুধ নিতে গেছি, বলে ওষুধ নেই। আবার পরীক্ষার জন্য বাইরে পাঠিয়েছে। খুবই কষ্টকর পরিস্থিতি।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “গরম-ঠান্ডার আবহাওয়ায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জার পাশাপাশি টাইফয়েড, পানিবাহিত রোগও দেখা যাচ্ছে। মৌসুমি জ্বরে প্যারাসিটামলই যথেষ্ট, অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন নেই।”
তিনি আরও জানান, “ডেঙ্গুতে চোখের পেছনে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা বেশি হয়। চিকুনগুনিয়ায় জয়েন্ট ব্যথা ও গায়ে লালচে দাগ স্পষ্ট থাকে।”
মুগদা মেডিকেলের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, “একাধিক ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি। ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা জরুরি।”