ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
বহুল আলোচিত বাণিজ্য অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের ইতি ঘটলো।
চুক্তির ঘোষণা আসে স্কটল্যান্ডে এক ঘণ্টাব্যাপী উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর। সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে উভয় পক্ষ চুক্তিকে ‘উইন-উইন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইইউ পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। তার ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যে শূন্য শতাংশ শুল্ক রেখে ইইউ আমাদের রপ্তানিকারকদের জন্য বাজার খুলে দিক।” তবে আলোচনার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত ১৫ শতাংশে একমত হয় দুই পক্ষ।
চুক্তি প্রসঙ্গে ভন ডার লিয়েন বলেন, “এই সমঝোতা দুই সহযোগীর মধ্যে স্থিতিশীলতা আনবে এবং বাণিজ্য সম্পর্ককে পুনরায় ভারসাম্য দেবে।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ছয়শ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং জ্বালানি খাতে খরচ করবে আরও সাড়ে সাতশ বিলিয়ন ডলার। এই বিনিয়োগের ফলে আমেরিকান এলএনজি, তেল ও পরমাণু জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা বাড়বে এবং রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা কমবে।
তবে চুক্তির বাইরে রয়ে গেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাত। ট্রাম্প জানিয়েছেন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আগের মতোই ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকবে। তবে রাসায়নিক, কৃষিপণ্য, এয়ারক্রাফট ও এর যন্ত্রাংশের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তিটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় সফলতা। তিনি আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ৯০ দিনে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তি করবেন। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি, কিন্তু ইইউ, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স ও ভিয়েতনামের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি করেছেন তিনি।
চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আদায় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি শত শত বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ আসবে মার্কিন অর্থনীতিতে।
২০১৪ সালে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছিল ৬০৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, আর দুই অঞ্চলের মোট বাণিজ্য ছিল ৯৭৬ বিলিয়ন ডলার। এই বিশাল ঘাটতিই ট্রাম্পের মূল অভিযোগ, যার ফলে তিনি এতটা আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি গ্রহণ করেন।
চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, শুল্ক বৃদ্ধি বাণিজ্যকে ব্যয়বহুল ও জটিল করে তুলবে। জার্মান চ্যান্সেলর ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) লেখেন, “বাণিজ্য সংঘাত আমাদের অর্থনীতিকে আঘাত করবে।” তবে ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং ভন ডার লিয়েন চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
চুক্তির সময় ট্রাম্প স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনে ছিলেন, যেখানে তার পরিবারের নতুন গলফ কোর্সের উদ্বোধন আসছে মাসে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার তার সঙ্গে বৈঠক করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও।
এই সমঝোতার ফলে বিশ্ববাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার আশা করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।