ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
গাজা, ২৭ জুলাই — ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ ও মানবিক সাহায্যে বাধা সৃষ্টি গাজার জনপদে সৃষ্টি করেছে এক ভয়াবহ ক্ষুধা ও মৃত্যুর মিছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা‘র বরাতে জানা গেছে, টানা অবরোধে আক্রান্ত ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী—বিশেষত নারী ও শিশুরা—ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে “ক্ষুধা”কে গণহত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। পশ্চিমা কিছু মিডিয়া এ বাস্তবতা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, ফিলিস্তিনের স্থানীয় সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুলে ধরছেন প্রকৃত চিত্র—ক্ষুধার কারণে মৃতপ্রায় শিশুদের করুণ আর্তনাদ।
বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় পরিস্থিতি নজিরবিহীন। একদিকে ত্রাণ আসা বন্ধ, অন্যদিকে খাদ্যের খোঁজে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর চলছে বর্বর হামলা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘ত্রাণ দিতে এসেছে’ বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরও ভয়াবহ তথ্য এসেছে—অনেক সময় এসব হত্যাকাণ্ড চালাতে ভাড়াটে সেনা ব্যবহার করছে ইসরায়েল।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী ব্রিটিশ চিকিৎসক নিক মেইনারড বলেন, “ক্ষুধার্ত রোগীদের এমন অবস্থায় দেখেছি, যেখানে শরীরের প্রতিটি হাড় স্পষ্ট। এমন দৃশ্য দেখে নিজেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “এখানে নারী-পুরুষ-শিশু কেউ বাদ নেই; সবাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।”
হাসপাতালগুলোতে শিশুমৃত্যু এখন যেন নিত্যদিনের ঘটনা। মুমূর্ষু শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ ও পানি কিছুই নেই। একাধিক হাসপাতালে শয্যার অভাবে মেঝেতে পড়ে থাকে দুর্বল, রুগ্ন শিশু-কিশোররা। অনাহারে অনেকেই দুর্বল হয়ে কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলছে।
এই নিপীড়নের ভয়াবহতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও, কার্যকর পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আহ্বান, অবিলম্বে গাজায় পূর্ণাঙ্গ মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে হবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
গাজার জনগণ আজ বেঁচে থাকার জন্য লড়ছে। প্রতিদিন গড়ানো এই মানবিক বিপর্যয়ের অবসান এখন সময়ের দাবি।