গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এক উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত এক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার পর বর্তমানে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে তাঁরা কেউই অভিযোগ স্বীকার করছেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। প্রশ্নের মুখে তিনি বারবার মাথা নিচু করে কাঁদছেন এবং মন্ত্রণালয়ের কাজের দায়দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে তিনি এককভাবে কিছু করেননি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রিকশাচালক কামাল মিয়ার মৃত্যু ঘটলে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হন পলক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। নিরাপত্তার কারণে তাঁদেরকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে রাখা হয় এবং ডিবির গুলশান বিভাগ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।
এদিকে, ছদ্মবেশে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বর্তমানে ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন। তদন্তকারী সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য তাঁরা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আনিসুল হক বলেন, “দেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর আমি একটি সমাধানের চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক সেতুমন্ত্রীর অ্যাগ্রেসিভ ভূমিকার কারণে তা সম্ভব হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বাস্তবতা বোঝানো যাচ্ছিল না, যার কারণে আন্দোলন একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।”
অন্যদিকে, মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময় ডিবির এক কর্মকর্তা সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হককে দায়ী করে বলেন, “আপনাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই দেশের এই অবস্থা।” এই মন্তব্যে তাঁরা ছিলেন নির্বিকার।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পর সরকারের দমন পীড়নের জেরে এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়, এবং শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন।