ডেস্ক রিপোর্ট | সকলের কণ্ঠ
কলকাতা, ২৫ জুলাই:
বাংলা ভাষার উপর চলমান ‘ভাষা-সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “প্রয়োজনে আবার ভাষা আন্দোলন হবে, কিন্তু মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করতেই হবে।”
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তমকুমারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায্য প্রভাব নিয়ে তিনি কঠোর সমালোচনা করেন।
মমতা বলেন, “মহানায়ক উত্তমকুমার আমাদের দেশের গর্ব, জাতির গর্ব, সংস্কৃতির গর্ব। প্রতি বছর এই দিনে আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। তিনি বাংলা সংস্কৃতির প্রতীক। অথচ আজ সেই বাংলা ভাষার ওপর সন্ত্রাস চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি—এই তিনটি জাতির মেরুদণ্ড। শিশুরা যেমন প্রথম ‘মা’ বলতে শেখে, আমরা তেমন মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে শিখি। অথচ আজ যারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। কোথাও কোথাও বাংলা বলার অপরাধে জেলে যেতে হচ্ছে, দেশান্তরী হতে হচ্ছে। এটা চলতে পারে না। দরকার হলে আবার ভাষা আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, বাংলা ভাষা বিশ্বে পঞ্চম এবং এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা। প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। তারপরও এই ভাষাকে যারা কোণঠাসা করতে চাইছে, তারা বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভুলে গেছে।
বাংলা সংস্কৃতিকে সম্মান জানাতে এবং বাংলা গানের শিল্পীদের প্রতি সম্মান জানাতে আহ্বান জানান মমতা। বলেন, “আমরা কাউকে ছোট করছি না, সব ভাষার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু বাংলার গান, চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের যথাযথ গুরুত্ব দিন। বাংলা ভাষাকে অপমান করবেন না।”
মমতার দাবি, “বাংলার উন্নয়নে কেউ কেউ ভয় পাচ্ছে, তাই বঞ্চনার রাজনীতি চলছে। বাংলা জন্ম দিয়েছে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের মতো মহান মনীষাদের। এখান থেকেই জাতীয় সঙ্গীতের জন্ম। বাংলা ভাষাই দিয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিশা। নবজাগরণের সূচনা হয়েছে এই ভাষাতেই।”
শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মাটি দুর্বৃত্তদের হবে না। বাংলার মানুষকে যদি মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার জন্য অন্যত্র গ্রেফতার করা হয়, তবে সেই লড়াই হবে দিল্লির মাটিতে। বাংলার ভাষা রক্ষায় আমরা শেষ পর্যন্ত দাঁড়াবো। দরকারে আবারও শুরু হবে ভাষা আন্দোলন।”