ঢাকা, ২৫ জুলাই:
একটি স্কুলব্যাগ, স্বপ্নভরা কিছু বইয়ের পাতা আর একটি শূন্য বেঞ্চ—সবই যেন সাক্ষী হয়ে থাকল ১৩ বছরের মাকিন সরকারের শেষ অধ্যায়ের। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর তিনদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হেরে গেল এই ছোট্ট শিক্ষার্থী। শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।
৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাকিনের বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাপাড়া এলাকায়। তার বাবা মোহাম্মদ হোসাইন জানান, প্রতিদিনের মতোই সেদিন সকালে স্কুলে গিয়েছিল মাকিন। কে জানতো সেটাই হবে তার জীবনের শেষ সকাল!
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় মাকিনের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। দগ্ধ হওয়ার পর থেকেই তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সর্বোচ্চ চিকিৎসার চেষ্টা চালানো হলেও শেষরক্ষা হয়নি। মৃত্যুর পর তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনো ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্তত ৫০ জন। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, আহতদের আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। সিঙ্গাপুর ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ইতোমধ্যেই চিকিৎসায় অংশ নিয়েছে। বর্তমানে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে কোনো রক্ত বা চামড়ার দাতার প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহন করা হচ্ছে।
এদিকে, হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা কড়া নজরদারি করছেন। দুর্ঘটনার তদন্তও চলছে পুরোদমে।
একটি নিষ্পাপ মুখ, একটি ফুটন্ত ফুল হারিয়ে গেল আগুনের লেলিহান শিখায়। মাইলস্টোনের সেই বেঞ্চে আর কোনোদিন বসবে না মাকিন। কিন্তু তার স্মৃতি থেকে যাবে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের হৃদয়ে।