সারাবিশ্ব ডেস্ক | ১৯ জুলাই ২০২৫
ইসরায়েলি আগ্রাসনের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকছে গাজার শিক্ষার্থীরা। যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো গাজায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা। অক্টোবরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই পরীক্ষার আয়োজন করে, যা শত শত শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ এনে দিতে পারে।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ জুলাই) গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডিজিটাল মাধ্যমে এই পরীক্ষার সূচনা করে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রায় ১,৫০০ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছে। গাজার ইতিহাসে এই প্রথম, শিক্ষার্থীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষাগুলো নেয়া হচ্ছে একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যারের মাধ্যমে, যার মাধ্যমে উত্তরপত্র মূল্যায়নসহ সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
যুদ্ধের মধ্যেই অনলাইন পরীক্ষা
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বাড়িতে বসে, কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্র বা ক্যাফেতে গিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ খুঁজে পরীক্ষা দিচ্ছে। অনেকের কাছে প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই, আবার অনেকেই ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণের কারণে পরীক্ষার সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
শিক্ষার্থী দোহা খাতাব বলেন, ‘আমরা অনলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছি, কিন্তু এটা খুবই কঠিন। ইন্টারনেট দুর্বল, অনেকের হাতে ডিভাইস নেই, আর পরীক্ষার জন্য নিরাপদ জায়গাও নেই। যুদ্ধের মধ্যে আমরা আমাদের বইগুলো পর্যন্ত হারিয়েছি।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঐতিহাসিক উদ্যোগ
শিক্ষাব্যবস্থার এই চরম বিপর্যয়ের মধ্যেও গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যা গাজার ইতিহাসে অনলাইন পরীক্ষার প্রথম বড় উদ্যোগ। পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের একটি মক টেস্টে অংশগ্রহণ করানো হয়, যাতে তাদের প্রস্তুতি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যাচাই করা যায়।
গাজার কেন্দ্রীয় গভর্নরেটের পরীক্ষা পরিচালক মুরাদ আল-আগা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অ্যাপ ডাউনলোড করে পরীক্ষা দিচ্ছে, তবে তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা এসব সমস্যার সমাধানে কাজ করছি যাতে সবাই নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারে।’
শিক্ষকেরা পাশে দাঁড়িয়েছেন
বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ক্লাসরুম খুলে শিক্ষার্থীদের সরাসরি সহযোগিতা করছেন। শিক্ষক ইনাম আবু স্লিসা বলেন, ‘এই অনলাইন পরীক্ষা গাজার ইতিহাসে প্রথম, তাই শিক্ষার্থীরা কিছুটা বিভ্রান্ত। আমরা চেষ্টা করছি ধাপে ধাপে তাদের সহযোগিতা করতে।’
ভবিষ্যতের জন্য একটি আশার আলো
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পরীক্ষাই হতে পারে গাজার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মোড় ঘোরানো সুযোগ—উচ্চশিক্ষা, আন্তর্জাতিক বৃত্তি এবং অবরুদ্ধ অঞ্চল থেকে বেরিয়ে নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার পথ। যুদ্ধের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হারিয়েছে। এই পরীক্ষার ফলাফল তাদের জন্য সেই হারানো সুযোগ ফিরিয়ে আনতে পারে।
আল জাজিরার সাংবাদিক আবু আজ্জৌম বলেন, ‘কোনো ক্লাসরুম নেই, বই নেই, ইন্টারনেট নেই—তারপরও গাজার শিক্ষার্থীরা লড়ছে। তারা যুদ্ধকে তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে দিচ্ছে না।’
ইসরায়েলের অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যেও এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, শিক্ষা কখনও থেমে থাকে না। গাজার শিক্ষার্থীরা আজ শুধু একটি পরীক্ষা নয়, বরং টিকে থাকার, জয়ের, আর আশার লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে।