সংবাদ প্রতিবেদন:
সিরিয়ার ভেতরকার সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলতে সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল— এমনটাই দাবি করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়াকে একত্র রাখতে না চাওয়ার পরিকল্পনায় সুপরিকল্পিতভাবে এই কৌশল নিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুজদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ দাঙ্গাকে উসকে দিচ্ছে তেলআবিব। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা সংঘাত জিইয়ে রাখাই যেন মূল উদ্দেশ্য। এতে করে সিরিয়ায় একটি ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে ওঠা রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সিরিয়ায় সংখ্যালঘু দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে সরকারি বাহিনীর হস্তক্ষেপ ও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দামেস্কে চালানো বিমান হামলা পরিস্থিতিকে করে তোলে আরও ঘোলাটে। যদিও ইসরায়েল দাবি করছে, দ্রুজদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক চাতুরী। তেলআবিব ইউনিভার্সিটির মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ জোয়েল ডি পারকার জানান, “ইসরায়েল থেকে প্রায় এক হাজার দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোক সিরিয়ায় গিয়েছে তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি জানাতে। আমি এর আগে কখনো দেখিনি ইসরায়েল নিজ দেশের নাগরিককে এভাবে বিদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। তাদের সাথে অস্ত্রও থাকতে পারে— যা একধরনের পরোক্ষ সতর্কবার্তা।”
সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত এলোন পিনকাস বলেন, “এই পদক্ষেপ একেবারে সুযোগসন্ধানী। যদি সত্যিই বন্ধু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে একই মনোভাব দেখা যেত কুর্দিদের ক্ষেত্রেও। প্রকৃতপক্ষে, সিরিয়ার ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা নেতানিয়াহুর জন্য বরং অস্বস্তিকর।”
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার শক্তিশালী নেতা আহমেদ আল শারার নেতৃত্বে যদি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠে, তবে সেটি ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর তাই বারবার যুদ্ধ পরিস্থিতি জিইয়ে রাখার প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য যে, সিরিয়ার প্রায় ৩ শতাংশ জনগণই দ্রুজ ধর্মাবলম্বী, যারা মূলত দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় সোয়েইদা প্রদেশে বসবাস করে। লেবানন ও জর্ডানেও এই সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে দ্রুজদের মোট সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এরা মূলত ‘আল-তাওহীদ’ নামে এক একেশ্বরবাদী দর্শনের অনুসারী, যার উৎপত্তি হয় ১১শ’ শতকে। এদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ ‘কিতাব আল-হিকমা’ অর্থাৎ ‘জ্ঞানগ্রন্থ’। তাদের বিশ্বাসে গ্রিক, পারস্য ও ভারতীয় দর্শনের প্রভাবও রয়েছে।
ইসরায়েল এবং দখলকৃত গোলান মালভূমিতে প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার দ্রুজের বসবাস, যাদের একটি বড় অংশ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ-এও যুক্ত রয়েছে। তাই এই সম্প্রদায়ের পক্ষ নেওয়ার অজুহাতে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির অপচেষ্টা করছে ইসরায়েল— এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।