স্টাফ রিপোর্টার | ১৮ জুলাই ২০২৪, ঢাকা
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দিনভর উত্তেজনা, সহিংসতা ও সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয় শহর। উত্তরা, মহাখালী, মিরপুর, ধানমন্ডি, প্রগতি সরণি, এমনকি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ভবন পর্যন্ত ছিল বিক্ষুব্ধ জনতার দখলে। পুরো দিনে পুলিশের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে নিহত হন অন্তত ৩১ জন, যাদের মধ্যে সাংবাদিক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রয়েছেন।
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির আওতায় বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকেই উত্তরা এলাকায় অবস্থান নেন হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। দাবি— কোটা সংস্কার। সেখানে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। টানা কয়েক ঘণ্টার সহিংসতায় পুলিশ ছোড়ে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড। আন্দোলনকারীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইট-পাটকেল ছুড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের একটি গাড়ি আন্দোলনকারীদের ওপর উঠে যায়— যা যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
এই ঘটনাতেই শুধু উত্তরা থেকে অন্তত আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আহত অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। সন্ধ্যায় নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে যমুনা টেলিভিশন।
উত্তরার পর মহাখালীতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর ও বনানী সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই সঙ্গে মিরপুরে আন্দোলনকারীরা ১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থিত পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ফলে মেট্রোরেলের নিচে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে, ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয় চারটি স্টেশন।
ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ। এদিন সংঘর্ষে ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদি হাসানসহ আরও একজন সংবাদকর্মী নিহত হন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রগতি সরণিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারান আরও অনেকে। আন্দোলনকারীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে র্যাব সদস্যদের হেলিকপ্টারে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ওই হেলিকপ্টার থেকেই ছোড়া হয় টিয়ারশেল ও গুলি।
বেলা ১২টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে দেশের অধিকাংশ জেলার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাত ৯টার পর ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা জনমনে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে তোলে।
এদিন গভীর রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, কোটা সংস্কার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে একমত এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “গুলির মুখে কোনো আলোচনা হতে পারে না।” আরেক নেতা নাহিদ ইসলাম জানান, “শহীদের রক্তের ওপর সংলাপ চলবে না।”
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বারুদের গতিতে। নরসিংদী, চট্টগ্রাম, সাভার, মাদারীপুর, রংপুর ও সিলেটেও বিক্ষোভের জেরে নিহত হন আরও ৮ জন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্যমতে, সারাদেশে সংঘর্ষে এদিন নিহত হন অন্তত ৩১ জন।
আন্দোলনকারীরা হামলা চালান বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) প্রধান কার্যালয়ে। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
ঢাকায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন দূতাবাস। তারা তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে চলাফেরা সীমিত রাখার পরামর্শ দেয়।