নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, ১৪ জুলাই ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা চললেও ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কমিয়ে আনার বিষয়ে এখনও কোনও অগ্রগতি নেই। গত ৯ জুলাই শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী বৈঠক শেষে দুই দেশের পক্ষ থেকেই আসেনি কোনো আশাব্যঞ্জক বার্তা। সরকারের নীতিনির্ধারকরাও এই বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিচ্ছেন না, বরং বলা হচ্ছে—জুলাইজুড়ে আলোচনা চলবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া আর বাংলাদেশের সক্ষমতার মধ্যকার ব্যবধান এখন প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্যারিফ (শুল্ক) ইস্যুতে এখনও রয়েছে ঘন কুয়াশা, যার প্রভাব পড়ছে রপ্তানির ওপর।
চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশে নিয়ে এলেও, এই হারে শুল্ক বহাল রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ওপর ১৫ শতাংশ বিদ্যমান শুল্কসহ মোট ৫০ শতাংশ কর বহন করতে হবে। যদি পরিস্থিতির উন্নয়ন না হয়, তাহলে আগষ্ট থেকেই এই উচ্চ শুল্ক দিয়ে মার্কিন বাজারে পণ্য রপ্তানি করতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান জানান, “আগস্ট থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে হঠাৎ করেই রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নামবে।”
ইতিমধ্যেই এই অভিঘাতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। উদ্যোক্তারা মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে ‘অপেক্ষা করতে হবে’— এমন বার্তা পাচ্ছেন, যা বাজারে তৈরি করেছে চরম অনিশ্চয়তা।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)–এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিস) থেকে প্রথম চিঠি ইতিবাচক ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় চিঠির বিষয়বস্তু এখনও অজানা। যদি ৩৫ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকে, তাহলে তা রপ্তানিকারকদের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।”
তিনি আরও বলেন, আগের অর্থবছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ফলে দেশটি বাংলাদেশের একটি প্রধান বাজারে পরিণত হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বাড়তি শুল্কের বোঝা সেই অগ্রগতি থামিয়ে দিতে পারে।
এই সংকটে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “যে ধরনের বিশেষজ্ঞ টিমে থাকা উচিত ছিল— যেমন মার্কিন বাজারে কাজ করা উদ্যোক্তা, গবেষক, বা ট্রেড লবিস্ট— তাদের কেউই আলোচনায় যুক্ত ছিলেন না। মার্কিন বাজারের বাস্তবতা ও কৌশলগত প্রস্তুতি ছাড়া এমন আলোচনায় ফলপ্রসূ কিছু আশা করা কঠিন।”