যশোর করেসপন্ডেন্ট:
যশোরে বন্ধুর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করায় আশরাফুল ইসলাম বিপুল (২৬) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত বিপুল যশোর শহরতলীর শেখহাটি জামরুলতলা এলাকার আখতার হোসেনের ছেলে এবং এসিআই গ্রুপের ডিপোতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শনিবার (১২ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের ষষ্ঠীতলা এলাকায় এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করছে, পূর্বপরিকল্পিতভাবে কৌশলে ফোন করে ডেকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে।
নিহতের বাবা আখতার হোসেন জানান, হত্যাকারী বাপ্পী ও নিহত বিপুল একসময় বন্ধু ছিলেন। বাপ্পী মাদক সেবন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তার স্ত্রী সুমাইয়া তাকে তালাক দেন। পরবর্তীতে সুমাইয়ার সঙ্গে বিপুলের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বাপ্পী এবং একপর্যায়ে তিনি হত্যার হুমকিও দিতে থাকেন।
পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, বাপ্পী শুধু হুমকিতেই থেমে থাকেননি; বাড়ির সামনে কয়েকবার বোমাবাজির ঘটনাও ঘটিয়েছেন। যদিও এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা হয়েছিল, কিন্তু কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
হত্যাকাণ্ডের রাতে কৌশলে অন্য একজনের মোবাইল থেকে ফোন করে বিপুলকে ষষ্ঠীতলা এলাকায় ডেকে নেয়া হয়। এরপর বাপ্পী ও তার সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতাল চত্বরে আহাজারি করতে দেখা যায় বিপুলের স্ত্রী সুমাইয়াকে। ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এই নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
> “বাপ্পী অনেক খারাপ ছেলে। তার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আমি তাকে তালাক দিই। পরে বিপুলের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে আমরা বিয়ে করি। এরপর থেকে বাপ্পী ও তার পরিবার আমাকে ও আমার স্বামীকে নানাভাবে উত্যক্ত করতো। থানায় একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সঠিক পদক্ষেপ নিতো, তাহলে আজ আমার স্বামীকে প্রাণ দিতে হতো না।”
তিনি আরও বলেন,
> “আমার পেটের সন্তানের কী হবে? কে নেবে তার দায়িত্ব? আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।”
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ শাকিরুল ইসলাম বলেন,
> “বিপুলের শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরপরই মৃত্যু হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
এদিকে, ঘটনার পরপরই যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত জানান,
> “খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে যায়। অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে এবং এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”