প্রথম পর্ব: সেকালের ব্যাংক দখল—অস্ত্রের মুখে ইউসিবিএল
১৯৯৯ সালের ২৬ আগস্ট মতিঝিলে ইউসিবিএল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু অস্ত্রের মুখে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ দখল করেন। ঘটনার বিবরণ দিয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আখতারুজ্জামান বাবু ও তার ছেলে জাভেদসহ প্রায় ৫০-৬০ জনের একটি অস্ত্রধারী ক্যাডার দল ব্যাংকের বোর্ডরুমে হামলা চালিয়ে পরিচালকদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করে।
আখতারুজ্জামান বাবুর ঋণখেলাপির মামলা চলাকালেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। দখলের পর তিনি নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে একটি বিজ্ঞপ্তিও পাঠান। এই ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরোধ ছিল মুখ্য, যার ফলস্বরূপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণের জন্য এই সশস্ত্র হামলা হয়। তবে পরে আদালতের আদেশে চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান জাফর আহমেদ চৌধুরী। তবুও, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর আখতারুজ্জামান বাবু আবারও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন। তখন থেকে ইউসিবিএল ব্যাংক তার পরিবারের দখলেই রয়েছে।
দ্বিতীয় পর্ব: একালের ব্যাংক দখল—এস আলমের রাষ্ট্রীয় মদদে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি
সময়ের সাথে সাথে ব্যাংক দখলের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন আর অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। সাইফুল আলম (এস আলম) ওরফে মাসুদ ব্যাংক দখলের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতির পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি, সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা দখল করেন। এক বিশেষ সংস্থার তত্ত্বাবধানে র্যাডিসন ব্লু হোটেলে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে এই মালিকানা পরিবর্তনের কাজ সম্পন্ন হয়।
ইসলামী ব্যাংকের পরে একই বছর নভেম্বর মাসে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) মালিকানাও বদলে যায়। তবে এবার স্থান ছিল পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন। সরকারের অনুমোদনক্রমে এবং বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার অধীনে এই পরিবর্তন ঘটানো হয়। এভাবে একের পর এক ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানায় চলে আসে, যা আধুনিক ব্যাংক দখলের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
আখতারুজ্জামান বাবুর সশস্ত্র দখল ও এস আলমের রাষ্ট্রীয় মদদে শান্তিপূর্ণ দখল, দুটোই বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। তবে এস আলমের পদ্ধতি আধুনিক যুগে ব্যাংক দখলের একটি ভয়ানক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।