আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) আফগানিস্তানে নারীদের ওপর পদ্ধতিগত নির্যাতনের অভিযোগে তালেবানের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আইসিসির বিচারকদের এক রায়ে তালেবান সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ও প্রধান বিচারপতি আব্দুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের সন্দেহে “যুক্তিসঙ্গত কারণ” থাকার কথা জানানো হয়।
আদালতের বিবৃতিতে বলা হয়, “যদিও তালেবান সরকার সব নাগরিকের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তবে নারীদের বিশেষভাবে তাদের লিঙ্গের কারণে টার্গেট করা হয়েছে এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”
বিচারকরা আরও জানান, তালেবান নারীদের শিক্ষা, চলাফেরা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পারিবারিক জীবন, মতপ্রকাশ, ধর্ম ও চিন্তার স্বাধীনতা থেকে গুরুতরভাবে বঞ্চিত করেছে। এমনকি যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়ের নির্দিষ্ট কিছু অভিব্যক্তি তালেবানের লিঙ্গ-নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় সেসব ব্যক্তিকেও টার্গেট করা হয়েছে।
তবে তালেবান সরকার দ্রুত এই পরোয়ানাকে ‘অযৌক্তিক বক্তব্য’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আইসিসির এখতিয়ার মানতে অস্বীকার করেছে।
তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসলামিক আমিরাত ইসলামি শরিয়ার পবিত্র আইন অনুযায়ী আফগানিস্তানে অতুলনীয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।” একইসঙ্গে তিনি গাজায় ‘প্রতিদিন শত শত নারী ও শিশু হত্যার’ ঘটনায় আইসিসির নীরবতা এবং ব্যর্থতাকেও উল্লেখ করেন।
আইসিসির তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত অপরাধগুলো ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট—তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকে শুরু হয়ে অন্তত চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলমান ছিল।
প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান জানুয়ারিতে এই গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করেন। তিনি বলেন, “আফগান নারী ও মেয়েরা তালেবানের দ্বারা এক অভূতপূর্ব, নিষ্ঠুর ও ধারাবাহিক নির্যাতনের মুখোমুখি হচ্ছে।”
জাতিসংঘের তথ্যমতে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অন্তত ১৪ লাখ আফগান মেয়ে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এর ফলে স্কুলগামী মোট মেয়েদের ৮০ শতাংশ—প্রায় ২৫ লাখ—বর্তমানে বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের শেষ দিকে তুরস্ক, সৌদি আরব ও কাতারসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তালেবানের নারী শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছিল।
সূত্র: আল জাজিরা