সকলের কণ্ঠ ডেস্ক:
ক্ষুধা, ভয় ও মৃত্যু—এই তিনটি শব্দই যেন আজ গাজাবাসীর দৈনন্দিন বাস্তবতা। ত্রাণের জন্য লড়াই করতে গিয়ে একের পর এক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারাচ্ছেন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে। যেন এক ‘রাশিয়ান রুলেট গেম’, যেখানে প্রতিটি চেষ্টা মৃত্যু ডেকে আনছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার ঝুঁকি নিয়েও গাজার নারী, পুরুষ ও শিশুরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন শুধুমাত্র একটি খাদ্য সহায়তার আশায়। খাবারের ট্রাক পৌঁছালেও সেই ট্রাকের পাশে দাঁড়ানো মানেই যেন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা। কারণ বহুবার দেখা গেছে, ইসরায়েলি ড্রোন বা স্নাইপার থেকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হচ্ছে এই সহায়তা প্রত্যাশী মানুষের ওপর।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মানবিক বিপর্যয়ের মূল কারণ হচ্ছে অব্যাহতভাবে গাজায় সহায়তা প্রবেশে বাধা এবং ইসরায়েল-মার্কিন সমর্থিত তথাকথিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ বা জিএইচএফ-এর গেট এলাকায় প্রাণঘাতী হামলা। হিউম্যানিটারিয়ান করিডোর বলেই চিহ্নিত স্থানেই রোজ প্রাণ হারাচ্ছেন সহায়তার জন্য অপেক্ষায় থাকা নিরীহ মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে হামাস যুদ্ধবিরতিতে পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। তাদের শর্ত—যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র অস্ত্রবিরতি না হয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করুক এবং জিএইচএফ-এর মতো হত্যাকেন্দ্রসম গেটগুলো বন্ধ করা হোক।
গত মার্চে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে উত্তর গাজা, খান ইউনুস ও রাফাহর মতো এলাকায় ফের বোমাবর্ষণ শুরু করে। ফলে, কখন ত্রাণ ঢুকবে, কখন রাস্তা খুলবে বা কখন আকাশ থেকে বোমা ঝরবে—এসব প্রশ্নে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ।
তবু মানুষ ত্রাণ নিতে যায়—জানে মরতে পারে, তবুও যায়। কারণ ক্ষুধা থেকে ধীরে ধীরে মারা যাওয়ার চেয়ে, লড়াই করে মরাকে গর্বের বলে মনে করেন অনেক গাজাবাসী।
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই সংকট কখন শেষ হবে? কতটা দুঃখ আর ধৈর্য্য বাকি আছে গাজাবাসীর মাঝে? এবং সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, বিশ্ব কবে এই মানবিক বিপর্যয়ের দিকে আন্তরিকভাবে তাকাবে? কবে আসবে একটি বাস্তব ও কার্যকর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, যেখানে জীবন বাঁচানো হবে অগ্রাধিকার?
সূত্র: আল জাজিরা