আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ৬ জুলাই ২০২৫, শনিবার
গাজার বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা খাবার সংগ্রহ করতে গেলে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৪৩ জন নিহত এবং ৪,৮৯১ জন আহত হয়েছেন ত্রাণ সংগ্রহের সময়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত বিতর্কিত মানবিক প্রকল্প “গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন” (জিএইচএফ) এর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। গত মে মাসের শেষ দিকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, বাস্তবের চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে। তিনি জানান, “এই সংখ্যাটিও রক্ষণশীল। অনেক হতাহতের তথ্য হয়তো এখনো প্রকাশই পায়নি।”
ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষুধার্ত পরিবারগুলো খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে বিভিন্ন বিতরণ কেন্দ্রে ভিড় করছে। মাহমুদ বলেন, “মানুষ ক্ষুধার্ত। মায়েরা সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে নিজেরাই উপোস করছেন।”
একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যে উঠে এসেছে, বিতরণ কেন্দ্রে আগত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর এক প্রতিবেদনে দুজন মার্কিন ঠিকাদার বলেন, “সশস্ত্র কর্মীরা ইচ্ছেমতো গুলি চালাচ্ছে।”
তবে জিএইচএফ এসব অভিযোগকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলে দাবি করেছে এবং বলেছে, তারা “নিরাপত্তা বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক”।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জিএইচএফ-এর পক্ষ নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, “এই সংস্থাই একমাত্র সত্তা যারা গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে পেরেছে।” জুন মাসের শেষ দিকে জিএইচএফকে ৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, শনিবার (৫ জুলাই) জিএইচএফ জানায়, খান ইউনিসে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে গ্রেনেড হামলায় দুই মার্কিন কর্মী আহত হয়েছেন। তবে এই হামলার জন্য কে দায়ী, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রকল্পকে “অমানবিক ও প্রাণঘাতী সশস্ত্র পরিকল্পনা” হিসেবে অভিহিত করেছে। অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জিএইচএফ-এর কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, “এই সংস্থা দুই মিলিয়ন মানুষকে অতিরিক্ত ভিড় ও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন গুলি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।”