আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ৬ জুলাই ২০২৫
গত মাসে ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে সংঘটিত ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হেনেছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত রাডার ডেটা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি এই প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার সময় ইরান ৫০০টিরও বেশি মিসাইল এবং ১,১০০ ড্রোন ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করেছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি-এর স্যাটেলাইট ডেটার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরানি মিসাইলগুলো ইসরায়েলের টেল নোফ বিমান ঘাঁটি, গ্লিলট গোয়েন্দা ঘাঁটি এবং জিপ্পোরিট অস্ত্র ও যানবাহন উৎপাদন কেন্দ্রসহ মোট পাঁচটি আইডিএফ ঘাঁটিতে আঘাত হানে। সামরিক সেন্সরশিপ আইনের কারণে ইসরায়েলের ভেতরে এসব হামলার বিস্তারিত প্রকাশ নিষিদ্ধ থাকলেও টেলিগ্রাফের রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।
মিসাইল হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
১২ দিনের এই যুদ্ধে ছয়টি মিসাইল সামরিক ঘাঁটিতে এবং আরও ৩৬টি মিসাইল ইসরায়েলের অভ্যন্তরে অন্যান্য স্থানে আঘাত হানে। এতে ২৮ জন নিহত হন, ১৩,০০০-এর বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২,৩০৫টি বসতবাড়ি, ২৪০টি ভবন, দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি হাসপাতাল।
বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, যুদ্ধের সপ্তম দিন নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ১৬ শতাংশ ইরানি মিসাইল ইসরায়েলি ও মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। এতে প্রতিরক্ষার সাফল্যের হার হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কেন ব্যর্থ হচ্ছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা?
প্রতিরক্ষার ঘাটতির পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েল হয়তো যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের জন্য ইন্টারসেপ্টর মিসাইল সংরক্ষণ করছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি প্রতিবেদনে জানায়, ইসরায়েলের অ্যারো ইন্টারসেপ্টর মিসাইল প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, ফলে প্রতিটি হুমকিকে প্রতিহত করার সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। যদিও আইডিএফ এই দাবিকে অস্বীকার করে বলেছে, তাদের প্রস্তুতি যথাযথ ছিল।
এছাড়া, ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো আরও উন্নত প্রযুক্তির হওয়ায় সেগুলো ধ্বংস করাও কঠিন হয়ে উঠেছিল। একটি ঘটনায় দেখা গেছে, ইরান ক্লাস্টার বোমার ওয়ারহেড ব্যবহার করে ৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে ক্ষুদ্র মারণাস্ত্র ছড়িয়ে দেয়, যার একটি আজোর শহরের একটি বাড়িতে আঘাত হানে।
ইসরায়েলের দাবি ও ইরানের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক ও মিসাইল অবকাঠামো ধ্বংসের জন্য এই অভিযান চালায়, যাতে ইরানের ‘ইহুদি রাষ্ট্র ধ্বংসের পরিকল্পনা’ বাস্তবায়িত না হয়। তবে ইরান সবসময়ই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার দাবি করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।