দোহা, ৬ জুলাই ২০২৫:
গাজায় চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মধ্যস্থতাকারীরা ফের আলোচনায় বসছে। কাতারের রাজধানী দোহায় রোববার (৬ জুলাই) থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন দফার পরোক্ষ আলোচনা শুরু হচ্ছে। মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিশরের তত্ত্বাবধানে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি একটি প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে দোহায় পৌঁছেছে। আলোচনা চলাকালে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চুক্তির আওতায় হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি ও কিছু মৃতদেহ ফেরত দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৬০ দিন।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাৎক্ষণিক ও গুরুত্বসহকারে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে তারা ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার, যুদ্ধকালীন সময়ে নতুন হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা বিতরণ পুনরায় শুরুর দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসের পক্ষ থেকে প্রস্তাবে কিছু ‘অগ্রহণযোগ্য’ দাবি রয়েছে। তার অফিস থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “হামাস কাতারি প্রস্তাবে যে পরিবর্তন আনতে চায়, তা ইসরায়েলের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।”
পর্যবেক্ষকদের মতে, যুদ্ধ অবসানের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নেতানিয়াহু এই আলোচনা পুনরায় শুরু করতে রাজি হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, আলোচনার পর তিনি ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ট্রাম্পও যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন।
এরই মধ্যে শনিবার (৫ জুলাই) ইসরায়েলের তেলআবিবে হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া পরিবারের সদস্যরা ও হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর এখনও গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানান।
অন্যদিকে, গাজা সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যদিও গাজায় মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা এবং বহু এলাকায় প্রবেশে বাধার কারণে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া হামলার বিষয়ে মন্তব্য করবে না।
এই আলোচনার ভবিষ্যৎ সাফল্য নির্ভর করছে দুই পক্ষের ছাড় দেওয়ার মনোভাব এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপের বাস্তবায়নের ওপর। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের বহুদিনের প্রত্যাশা—এই যুদ্ধের অবসান ও শান্তিপূর্ণ সমাধান—কি আদৌ বাস্তব রূপ পাবে, তা সময়ই বলবে।
সূত্র: আরব নিউজ, এএফপি