ঢাকা, ১০ মহররম, ২০২৫ (স্টাফ রিপোর্টার):
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা—ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক শোকাবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ৬১ হিজরির এই দিনে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) পরিবার-পরিজনসহ শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর আত্মত্যাগ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের চিরন্তন প্রতীক হয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
হজরত আলী (রা.)-এর মৃত্যুর পর ইসলামের ইতিহাসে নতুন মোড় নেয়। তৎকালীন খলিফা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) জীবিত অবস্থাতেই তাঁর পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন। তবে ইয়াজিদের নেতৃত্বকে গ্রহণ না করে ইমাম হোসেন (রা.) বাইয়্যাত দিতে অস্বীকৃতি জানান। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি মদিনা ত্যাগ করে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
কিন্তু পথে তাঁরা কারবালায় পৌঁছালে ইয়াজিদের সেনাপতি উমর ইবনে সাদের নেতৃত্বে প্রায় চার হাজার সৈন্য তাঁদের ঘিরে ফেলে। ইমাম হোসেন (রা.)-এর শিবিরে পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নারী ও শিশুদের তৃষ্ণায় কাতর অবস্থায় রেখে আত্মসমর্পণের চাপ সৃষ্টি করা হয়, তবে ইমাম হোসেন তাতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত ১০ মহররমের দিনে এক অসম যুদ্ধে ইমাম হোসেন ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদাত বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশানের হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর মুসলিম বিশ্বে পবিত্র আশুরা পালন করা হয়। বাংলাদেশেও দিনটি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা এ দিনে ইমাম হোসেনের শোকে মাতম করেন এবং তাজিয়া মিছিল বের করেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক হোসেনি দালান থেকে দেশের সবচেয়ে বড় তাজিয়া মিছিলটি সকাল থেকেই বের হয়েছে। এটি লালবাগ, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে প্রতীকী ‘কারবালা’ প্রান্তে গিয়ে শেষ হবে। আশুরা উপলক্ষে এই এলাকাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিসিটিভি ক্যামেরা, চেকপোস্ট ও র্যাব-পুলিশের টহলও রয়েছে সর্বত্র।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে বলেন,
> “শোকাবহ এই দিনে আমি হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালায় শাহাদতবরণকারী সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের আত্মত্যাগ অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত।”
তিনি আরও বলেন,
> “কারবালার ঘটনা ছাড়াও আশুরা ইসলামের ইতিহাসে একটি ফজিলতপূর্ণ দিন। এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আমরা যেন এই দিনে বেশি বেশি নেক আমল ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট হই।”
ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, পবিত্র আশুরা শুধু শোকের নয়, বরং ন্যায়, ত্যাগ ও সাহসিকতার শিক্ষা দেয়। সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবতা প্রতিষ্ঠায় ইমাম হোসেন (রা.)-এর জীবন ও আত্মত্যাগ এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।