আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার (৪ জুলাই) স্থানীয় সময় রাতভর চলা এই ভয়াবহ হামলায় শহরের আকাশ ধোঁয়া ও বিস্ফোরণের গন্ধে ভারী হয়ে উঠে। একই দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে তার আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের দাবি, এটি চলমান যুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান হামলা। ১৩ ঘণ্টা স্থায়ী এই হামলায় রাজধানী কিয়েভে বহু আবাসিক ভবন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় জরুরি সেবার তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে একজন নিহত ও অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানায়, রাশিয়া মোট ৫৩৯টি ড্রোন নিক্ষেপ করে, যার মধ্যে ৪৭৬টি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। এ ছাড়া ১১টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক মিসাইলও নিক্ষেপ করে রুশ বাহিনী।
আঞ্চলিক কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেনের নতুন ইন্টারসেপ্টর ড্রোন ৬০টি রুশ ড্রোন সফলভাবে গুলি করে নামিয়েছে। তবে হামলার তীব্রতায় বহু ভবন ধ্বংস হয় এবং বিস্ফোরণের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কিয়েভের রেলপথ, আবাসিক এলাকা এবং পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হামলার সময় হাজারো বাসিন্দা আশ্রয় নিতে বাধ্য হন মেট্রো স্টেশন ও ভূগর্ভস্থ পার্কিং লটে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সাইবিহা একে যুদ্ধের ‘সবচেয়ে ভীতিকর রাত’ বলে অভিহিত করেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলাকে ‘দেশটির ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ বিমান হামলা’ বলে উল্লেখ করেন।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, এই রাতভর হামলার পর কিয়েভের বায়ুদূষণের মাত্রা ‘উচ্চ’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। নাগরিকদের ঘরে অবস্থান, জানালা বন্ধ রাখা এবং এয়ার পিউরিফায়ার চালিয়ে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তাও জারি করা হয়েছে।
এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক ঘণ্টার ফোনালাপ করেন। তবে আলোচনায় কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি প্রকাশ্যে হতাশা জানান।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইউক্রেন নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুতিনের মধ্যে যুদ্ধ থামানোর কোনো ইচ্ছা দেখিনি।”
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ জানান, রাশিয়া ট্রাম্পের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
কিয়েভের বাসিন্দারা ট্রাম্পের অবস্থানে ক্ষুব্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা ইউরি বলেন, “পুতিন একজন গুণ্ডার মতো আচরণ করে, আর ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিচ্ছেন না। ফলে রাশিয়া নিজেদের দোষমুক্ত মনে করছে। এটা স্রেফ সন্ত্রাস।”
২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় সামরিক সহায়তাদাতা। তারা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন, রাডার, ট্যাংক ও অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করেছে। তবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এই সহায়তা পুনর্মূল্যায়নের ফলে কিয়েভের উদ্বেগ বেড়েছে।
হামলায় পোল্যান্ডের কিয়েভ কনস্যুলেটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্ল সিকোর্স্কি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিমান-বিরোধী গোলাবারুদ সরবরাহ পুনরায় চালু ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।