সংবাদ প্রতিবেদন:
গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে বারবার প্রাণঘাতী হামলার ঘটনায় নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে ইসরায়েলের বেসরকারি সামরিক ঠিকাদারদের (প্রাইভেট মিলিটারি কন্ট্রাক্টর) ব্যবহার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে এক ধরনের ‘গণহত্যা আউটসোর্সিং’ করছে তেলআবিব সরকার।
আঙ্কারা থেকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইউসুফ আলাবার্দা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর বদলে বেসরকারি সামরিক ঠিকাদার নিয়োগ করে গাজার জনসংখ্যার জাতিগত নির্মূলের পথ সুগম করছেন।”
তার ভাষায়, “এই ঠিকাদারদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—এরা কোনো জবাবদিহিতার আওতায় পড়ে না এবং আইনি বাধ্যবাধকতা এড়াতে সক্ষম। অনেক রাষ্ট্র নিজেদের ‘নোংরা যুদ্ধ’ চালাতে এদের নিয়োগ দেয়। ইসরায়েল এখন সেই পথেই হাঁটছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, গাজায় রাফাহসহ একাধিক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে এসব ঠিকাদারদের প্রধান কাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানো এবং জনমনে আতঙ্ক তৈরি করা। এর মাধ্যমে নেতানিয়াহু সরকার চায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে সরাসরি যুদ্ধাপরাধে না জড়াতে।
আলাবার্দা বলেন, “এই পদ্ধতির মাধ্যমে নেতানিয়াহু চায় হত্যাযজ্ঞের দায়ভার রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ওপর না পড়ে ঠিকাদারদের ঘাড়ে চাপাতে। এটি মূলত যুদ্ধাপরাধকে লুকানোর একটি কৌশল।”
জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গেলো কয়েক মাসে শুধুমাত্র গাজা উপত্যকার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি। মে মাসেই নিহতের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৬০০।
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, মার্কিন প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক ইন্টিউইফেন (ECRI)-এর অধীনে নিয়োজিত ঠিকাদাররা ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে গোপন মিশনে অংশ নিচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. লামিস আন্দোনি বলেন, “গণহত্যার দায় থেকে মুক্তি পেতেই ইসরায়েল বেসরকারি সামরিক বাহিনী ব্যবহার করছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ।”
তিনি আরও বলেন, “এই পদ্ধতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেলেও দায় এড়াতে পারছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র। এটি একটি গভীর উদ্বেগজনক প্রবণতা।”
ইসরায়েলি বাহিনী বারবার দাবি করে আসছে, তারা শুধু হামাসের অবস্থান ও সদস্যদের লক্ষ্য করেই হামলা চালায়। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। রাফাহ থেকে গাজা শহর—প্রতিটি জায়গায় সাহায্য নিতে আসা সাধারণ নারী-শিশু পর্যন্ত এই হামলার শিকার হচ্ছেন।