ঢাকা, ২৮ জুন — রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে অবস্থিত ‘মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণ’-এর ম্যুরালসহ সাতটি দেয়াল ভেঙে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে প্রাঙ্গণের ভাঙার কাজ শুরু হয় এবং শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
‘মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণ’-এর দেয়ালগুলোর উপর চিত্রিত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চূড়ান্ত বিজয়ের দিন পর্যন্ত। প্রতিটি দেয়ালই ছিল একেকটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষ্যবহনকারী। তবে গত বছর ৫ আগস্ট, গণ-অভ্যুত্থানের দিনে সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভাঙার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে একটি এক্সকাভেটর। ধ্বংসপ্রাপ্ত কংক্রিটের টুকরাগুলো খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে এবং প্রাঙ্গণের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়েছে চট দিয়ে। লোহার রডগুলো পড়ে আছে এলোমেলোভাবে, আর কিছু অংশে চলছে মাটি সমান করার কাজ।
ডিএনসিসির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভাঙার কারণ জানানো না হলেও, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে—মৃত্যুঞ্জয় প্রাঙ্গণের জায়গায় নির্মিত হবে ‘জুলাই শহীদদের ভাস্কর্য’। ১৯৭৪ সালের ১৭ জুলাই সেনাবাহিনীর বিদ্রোহে শহীদ হওয়া কর্মকর্তাদের স্মরণে এই ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নতুন ভাস্কর্য নির্মাণের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ পুরনো ঐতিহাসিক চিত্রমালার ধ্বংস নিয়ে শোক প্রকাশ করলেও, অন্য একাংশ বলছেন—নতুন ভাস্কর্যও দেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়কে তুলে ধরবে।
তবে স্থানীয় নাগরিকদের দাবি, যেকোনো ভাস্কর্য নির্মাণের আগে উচিত জনগণের মতামত ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার দ্বন্দ্বে ঢাকা যেন ইতিহাসের স্মারক হারিয়ে না ফেলে, এই আহ্বানই এখন তাদের মুখে মুখে।