লন্ডন, ১১ জুন ২০২৫ — প্রতিবেদক:
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে ইসরায়েলের দুই চরমপন্থী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং নরওয়ে। ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন।
বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হলো দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতায় উসকানি প্রদানকারী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা। পাঁচ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের সমর্থনের পরিপন্থী নয় বরং তাদের আন্তর্জাতিক অবস্থান রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত বেন গাভির ও স্মোত্রিচ উভয়েই প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তারা ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে পরিচিত, যাদের বক্তব্য ও অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচিত।
বেন গাভির সম্প্রতি বলেন, “নিষেধাজ্ঞা আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না। আমি গাজায় হামাসকে মানবিক সহায়তা বন্ধ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাব।” অন্যদিকে স্মোত্রিচ বলেন, “ব্রিটেন আমাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কারণ আমি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরোধিতা করি। এটা প্রমাণ করে, ব্রিটেন আবারও আমাদের মাতৃভূমিতে বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান থেকে একটি স্পষ্ট ভিন্নমত প্রদর্শন করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে, তবে সম্প্রতি তারা জাতিসংঘে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো প্রদান করেছে, যা পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য স্পষ্ট করে।
বিপরীতে, যুক্তরাজ্য গত মাসে পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করে। এবার তারা সরাসরি চরম ডানপন্থী ইসরায়েলি নেতাদের লক্ষ্য করলো।
ইসরায়েলি সরকার এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন স্যার জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে সরকার একটি বিশেষ বৈঠকের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের জবাব নির্ধারণ করবে।
বেন গাভির পূর্বে নেতানিয়াহুর সরকার থেকে পদত্যাগ করলেও মার্চে ফের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছা অভিবাসনের পক্ষে এবং সেখানে ‘মানবিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন। স্মোত্রিচও পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনের পক্ষে সোচ্চার, যা আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত।