ভারত-পাকিস্তান সন্ত্রাসী হামলা: ‘অপারেশন সিঁদুরের’-এর মাধ্যমে নতুন উত্তেজনা
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারতের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনা দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক, সামরিক ও শোবিজ অঙ্গনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ উঠে এসেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিকস টাইমস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিরা খান এবং হানিয়া আমির ভারতের সামরিক হামলার তীব্র সমালোচনা করেছেন। এছাড়া পাকিস্তানি অন্যান্য তারকাও এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুরের’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক নতুন পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় একযোগভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই সামরিক অভিযানটি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল, যা পাকিস্তানে অবস্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে এক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলা ছিল অত্যন্ত নিখুঁত এবং পরিকল্পিত, যার উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা, না যে কোনো বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু করা।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “এই হামলাগুলো ছিল সন্ত্রাসী অবকাঠামোর বিরুদ্ধে এক অত্যন্ত নিখুঁত এবং পেশাদারী পদক্ষেপ। কোনো পাকিস্তানি সেনা বাহিনীকে লক্ষ্য করা হয়নি এবং সীমিত পরিসরে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হয়েছে।” এই অভিযানটি ‘অপারেশন সিঁদুরের’ নামকরণ করা হয়, যা আসলে পূর্বের সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এক সামরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ভারতীয় হামলার পর পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামরিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ক্ষোভের সুর উঠেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান এবং অন্যান্য নেতারা একযোগে ভারতীয় হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, ভারতীয় হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এর জন্য ভারতকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই হামলার বিষয়ে একটি টুইট করা হয়, যেখানে বলা হয়, “ভারতীয় আগ্রাসনের কোনো সদুত্তর না থাকলে পাকিস্তান অবশ্যই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে।”
এছাড়া, পাকিস্তানি শোবিজ অঙ্গনের তারকাও এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিরা খান ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লেখিকা ফাতিমা ভুট্টোর একটি টুইট শেয়ার করেন, যেখানে লেখা ছিল, “কাপুরুষতা!!! আল্লাহ আমাদের দেশকে হেফাজত করুন, বোধোদয় হোক। আমিন।” এই টুইটটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়।
তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমিরও তার ইনস্টাগ্রামে ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি একাধিক পোস্টে ভারতীয় সামরিক পদক্ষেপকে ‘কাপুরুষতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তানী মিডিয়া এবং শোবিজ অঙ্গনের অধিকাংশ তারকাই এ হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং তাদের দেশকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজেদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
ভারতীয় সামরিক হামলার পর পাকিস্তানের বেশ কিছু শোবিজ তারকাকে ভারতের সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোতে ব্লক করা হয়। পাকিস্তানি সেলিব্রিটিদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টগুলি ভারতে জিও-ব্লক করা হয়। বিশেষ করে মাহিরা খান, ফাওয়াদ খান, আলি জাফরের মতো তারকাদের অ্যাকাউন্টে এই ব্লকেশন কার্যকর করা হয়। ভারত সরকারের দাবি, ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়, যাতে পাকিস্তানি সেলিব্রিটিদের ভারতীয় প্ল্যাটফর্মে কোনও ধরনের উপস্থিতি বা যোগাযোগ সম্ভব না হয়। এই পদক্ষেপের পর সেলিব্রিটিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, কারণ তারা নিজের কাজ এবং মনোভাবের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে শান্তি এবং বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
ভারতীয় সরকার অবশ্য নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, এই সামরিক হামলা ছিল শুধুমাত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও তাদের অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, অপারেশন সিঁদুরের ছিল একটি পরিমিত, নির্ভুল এবং অ-উত্তেজনামূলক পদক্ষেপ। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তানের পিওকে (পাক Occupied Kashmir) এবং পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত সন্ত্রাসী শিবিরগুলোর বিরুদ্ধে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে সম্পন্ন করা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ও বান্দি সঞ্জয় কুমার সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “পেহেলগামে নিহতদের রক্তের বদলা নেওয়া হয়েছে। এবার শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।”
এ হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে। কিছু দেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় সামরিক পদক্ষেপের প্রশংসা করা হলেও, অনেক দেশই এ হামলাকে উস্কানিমূলক হিসেবে দেখেছে। তবে, বেশিরভাগ দেশই উভয় পক্ষকে শান্তি এবং সংযম বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে। জাতিসংঘও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এখন নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। একদিকে ভারত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তানও প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা আরও তীব্র হলে আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে, দুই দেশ নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে। তবে, এই সামরিক হামলা ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে, যা কেবল দুটি দেশের মধ্যে নয়, বরং সমগ্র উপমহাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এই নতুন উত্তেজনা নতুন আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য এক বড় হুমকি। সামরিক উত্তেজনা শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে নেমে আসবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।