ঢাকা, ১৮ আগস্ট ২০২৪: ছাত্র বিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের পর ‘আয়না ঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্তি পেয়েছেন শেখ হাসিনা সরকারের সময় গুম হওয়া বেশ কিছু ব্যক্তি। দীর্ঘ আট বছর ধরে বন্দী থাকা জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাশেম আরমানও মুক্তি পেয়েছেন সেই দিন মধ্যরাতে। পরদিন পরিবারের কাছে ফিরে আসেন তিনি।
আয়না ঘরে তার বন্দিদশা নিয়ে ইতোমধ্যে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য জানিয়েছেন আরমান। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আয়না ঘরের দিনগুলো নিয়ে কথা বলেছেন। এবার, আরমানের পরিবারের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ প্রকাশ করেছে নতুন একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরমানকে ‘বন্দিদশা’ থেকে মুক্ত করতে যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে সহায়তা চেয়েছিল তার পরিবার, তবে তারা কোনো সহায়তা পাননি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রায় এক দশক ধরে আটক থাকা ব্রিটিশ-প্রশিক্ষিত ব্যারিস্টার কাশেম আরমানকে সাহায্য করতে ব্যর্থ হন টিউলিপ সিদ্দিক, যদিও তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবহার করে তাকে মুক্ত করার সুযোগ ছিল।
আরমানের আইনজীবী মাইকেল পোলাক বলেন, “বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরেও টিউলিপ শেখ হাসিনাকে তার মহান আদর্শ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আমরা টিউলিপ সিদ্দিককে তার খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে এ বিষয়ে (আরমানের মুক্তির বিষয়ে) কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত, টিউলিপ সাহায্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।”
পোলাক আরও বলেন, “যদি তিনি হস্তক্ষেপ করতেন, তাহলে আলোহীন গোপন কক্ষে আট বছর বন্দী না থেকে, আরমান স্ত্রী এবং দুই কন্যার সঙ্গে থেকে তাদের বেড়ে উঠা দেখতে পারতেন। টিউলিপ কেন এমনটা করলেন, আমি এখনও বুঝতে পারছি না।”
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে বাংলাদেশে বিরোধীদের আক্রমণ, গ্রেপ্তার, গোপনে বন্দি করা, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাশেম আরমানকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
আরমানের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) তার পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারা বলেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলে জোরপূর্বক গুম এবং নির্বিচারে আটক রাখার একটি সরকারি নীতি ছিল। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে আরমানকে মুক্তি দেয়া হয়, যা সেই নীতিরই প্রতিফলন।”