গাজীপুরে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর উপর হামলার পর আলোচনায় নাসির মোড়ল
গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িবহরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর, রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন নাম ঘুরে ফিরে আলোচনায় উঠে এসেছে — নাসির মোড়ল। ৪ মে রোববার সন্ধ্যায় গাজীপুরের ব্যস্ত বাসন সড়ক এলাকায় সংঘটিত এই হামলার পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্তে নামে গাজীপুর মহানগর পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় হাসনাত আব্দুল্লাহ গাড়িযোগে একটি রাজনৈতিক সভা শেষে ঢাকা ফেরার পথে গাজীপুরের বাসন সড়কে ১০-১২ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। হাইস গাড়ির কাচ ভেঙে যায় এবং হামলায় তার হাত গুরুতরভাবে আহত হয়। ঘটনার পর তিনি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির সামনে কিছু সময় অবস্থান করেন এবং পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
ঘটনার পরপরই গাজীপুর মহানগর পুলিশের একাধিক টিম অভিযান শুরু করে। পরে রাতে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে নিজাম উদ্দিন তুষার ও জোবায়ের হোসেন শিমুল নামে দুইজনকে আটক করা হয়। গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং অন্য জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
এই হামলার ঘটনার পর এনসিপির অভ্যন্তরে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে একটি নাম — নাসির মোড়ল। তিনি এনসিপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পূর্বে থেকে সক্রিয় এবং বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত অবস্থানে ছিলেন।
যদিও পুলিশ বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম উল্লেখ করেনি, তবে এনসিপির কিছু নেতাকর্মী তাকে এই ঘটনার সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত বলে দাবি করছেন। হাসনাত আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, হামলার আগে থেকেই কিছু রাজনৈতিক বিরোধ ও দমন-পীড়নের আলামত ছিল যা এই হামলার ইঙ্গিত দেয়।
হামলার ঘটনার পরপরই এনসিপি নেতা-কর্মীরা গাজীপুরের বোর্ড বাজার, চান্দনা চৌরাস্তা ও টঙ্গীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিও জানান তারা। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যার পেছনে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশীর্বাদ থাকতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে দুটি বড় গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। একটি গ্রুপ হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে, অপরটি নাসির মোড়লের ছায়াতলে সক্রিয়। রাজনৈতিক পদ ও কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব অনেকদিন ধরেই বিদ্যমান। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলই হয়তো হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং যেকোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থেকে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ঘটনার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে একাংশ এনসিপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে দায়ী করলেও অন্যরা এটিকে রাজনৈতিক সহিংসতার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন।
গাজীপুরে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শুধু রাজনীতিতে নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নাসির মোড়লের নাম আলোচনায় উঠে আসা এই ঘটনার রাজনৈতিক মাত্রাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এখন দেখার বিষয় — পুলিশি তদন্তে এই ঘটনার পেছনের প্রকৃত রহস্য কতটা উদ্ঘাটিত হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সুশাসনের স্বার্থে ও রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।