ইসরায়েলে হুতি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: বেন গুরিয়ান বিমানবন্দরের নিকটে বিস্ফোরণ
ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে অবস্থিত বেন গুরিয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি আঘাত হেনেছে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। রোববার (৪ মে) সকালে এ হামলার পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। হামলার ঘটনায় অন্তত ছয়জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, হামলার পরপরই রাজধানী তেল আবিব এবং আশপাশের এলাকায় সাইরেন বাজানো হয়। সাধারণ জনগণ দ্রুত বাংকার এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থলে ছুটে যায়। ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানবন্দর টার্মিনালের নিকটে বিস্ফোরিত হয় এবং এর ফলে ভূমিতে বড় একটি গর্ত তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টা নাগাদ বিমান চলাচল স্থগিত করা হয় এবং ফ্লাইটগুলো অন্যত্র পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পর পুনরায় আংশিকভাবে ফ্লাইট চলাচল শুরু হলেও পরিস্থিতি এখনো থমথমে।
ইয়েমেনের হুতি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি এক টেলিভিশন বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “ইসরায়েলের বিমানবন্দর এখন আর নিরাপদ নয়। যতক্ষণ না গাজায় আগ্রাসন বন্ধ হয়, আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।” তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ বৈধ এবং তারা ইসরায়েলের ভেতরে আরো টার্গেট করার পরিকল্পনা করছে।
হামলার সময়কার একাধিক ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে। ফুটেজে দেখা যায়, আতঙ্কিত চালকেরা হঠাৎ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছেন। একটি দৃশ্যে ক্ষেপণাস্ত্রটি আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠে যায়। তবে এসব ভিডিওর স্বতঃসিদ্ধতা এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
হামলায় সরাসরি চারজন আহত হয়েছে এবং আরও দুইজন বাংকারে পালানোর সময় আঘাত পেয়েছে বলে জানা যায়। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাস্থলে জরুরি মেডিকেল টিম এবং পুলিশ দ্রুত পৌঁছায়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, “যে আমাদের আঘাত করবে, তাকে আমরা সাতগুণ জবাব দেব।” তিনি হুতিদের এ ধরনের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা শত্রুর প্রতিটি আগ্রাসনের কঠিন জবাব দেব।” একইসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্রটি থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এবারের হামলায় প্রশ্ন উঠেছে ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে। সাধারণত এই সিস্টেমই হুতিসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে ধ্বংস করে। কিন্তু রোববারের এই হামলায় সিস্টেমটি ব্যর্থ হয়েছে এবং বিস্ফোরণ হয়েছে জনবহুল এলাকার খুব কাছে। প্রতিরক্ষা বাহিনী এ ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।
ইসরায়েল ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যকার এই উত্তেজনা নতুন নয়। গত কয়েক মাসে হুতি গোষ্ঠী একাধিকবার ইসরায়েলের দিকে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। তবে এর বেশিরভাগই লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। রোববারের হামলাটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং কৌশলগতভাবে স্পর্শকাতর জায়গায় সংঘটিত হওয়ায় তা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক প্রতিনিধি উভয় পক্ষকে সংঘাত এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, গাজায় চলমান সংঘর্ষ থামানোর জন্য হুতি গোষ্ঠীর এই কৌশল ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে। তবে ইসরায়েলও প্রতিক্রিয়ায় সরাসরি ইয়েমেনের অভ্যন্তরে সামরিক অভিযানে যেতে পারে, যার ফলে পুরো অঞ্চল এক অনির্দেশ্য সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বেন গুরিয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছাকাছি হুতিদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্লাইট স্থগিত, জনমনে আতঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ—সবকিছু মিলিয়ে এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। এখন দেখার বিষয়, ইসরায়েল এর জবাবে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আন্তর্জাতিক মহল কীভাবে এই উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখে।