চট্টগ্রাম নগরীতে উন্মুক্ত খাল-নালার অনিরাপদ অবস্থান যেন একের পর এক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। গত ১৯ এপ্রিল চকবাজারের হিজরা খালে ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে পড়ে প্রাণ হারায় এক শিশু। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। খালটিতে অস্থায়ীভাবে বাঁশের সুরক্ষা বেষ্টনী স্থাপন করা হয়।
ঘটনার পরপরই নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ খাল, নালা ও ড্রেন চিহ্নিত করতে মাঠে নামানো হয় ৬ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে। তারা ৪১টি ওয়ার্ডে জরিপ চালিয়ে ৫৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেন। এ সব এলাকায় অস্থায়ী বেষ্টনীর পাশাপাশি স্থায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে বা ভারী বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে গেলে রাস্তা ও নালার ফারাক বোঝা যায় না। এতে নানান দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাদের মতে, আগেই যদি এসব উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে শিশুটির মৃত্যু এড়ানো যেত। তবে বর্তমান উদ্যোগকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “কোনো দুর্ঘটনাই কাম্য নয়। একটি শিশুর মৃত্যু আমাদের সবাইকে নাড়া দিয়েছে। আমরা চাই না কোনো মায়ের বুক খালি হোক। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা খাল-নালা সংস্কারের পাশাপাশি সুরক্ষিত করতে উদ্যোগ নিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, আপাতত বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী বেষ্টনী তৈরি করা হলেও শিগগিরই স্থায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লক্ষ্য একটাই—চট্টগ্রামকে একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও জলাবদ্ধতামুক্ত শহরে রূপান্তর করা।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “নগর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাল ও নালাগুলোকে নিরাপদ রাখতে হবে। বেষ্টনী না থাকলে সেগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।”
উল্লেখ্য, গত আট বছরে চট্টগ্রামে খাল ও নালায় পড়ে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ পরিসংখ্যানই বলছে, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আরও ঘটতে পারে।