সাবহেডলাইন: তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা, বাড়ছে জল্পনা—টু ফ্রন্ট স্ট্র্যাটেজির পরিকল্পনায় ভারত!
—
পহেলগামে হামলার পরই নড়েচড়ে বসেছে নয়াদিল্লি। প্রতিশোধের হুঁশিয়ারির মাঝে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে ‘টু ফ্রন্ট ওয়ার’ বা দ্বিমুখী চাপের কৌশল নিয়েই কি এগোচ্ছে মোদি সরকার?
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় একাধিক ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ প্রদান করেন। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং বিশেষ প্রতিনিধি আনন্দ প্রকাশ কাবুল সফরে যান এবং তালেবান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন।
২৭ এপ্রিল কাবুলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে আলোচনায় বসেন আনন্দ প্রকাশ। যদিও বৈঠকের পর কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবু ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়—আলোচনায় পরিকাঠামোগত বিভিন্ন প্রকল্পে পুনঃবিনিয়োগ এবং সহযোগিতা ছিল মুখ্য বিষয়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারত তাদের পূর্ববর্তী উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ স্থগিত করে দেয়। এবার সেই প্রকল্পগুলো পুনরায় চালুর বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখানো হয়েছে। অপরদিকে, তালেবান মন্ত্রী আফগান নাগরিকদের জন্য ব্যবসা, চিকিৎসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ জানান।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের এই প্রচেষ্টাকে অনেক বিশ্লেষক ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন। কারণ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার ‘ডুরান্ড লাইন’ নিয়ে পুরনো বিবাদ রয়েছে। কাবুল একে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এই সীমান্ত ইস্যুতে তালেবান ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এছাড়া পাকিস্তান সীমান্তঘেঁষা খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে, যারা ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই গোষ্ঠী কাশ্মীর ইস্যুতেও পাকিস্তানের অবস্থানের বিপরীতে রয়েছে।
পাকিস্তানের দাবি, টিটিপিকে সমর্থন দিচ্ছে আফগান তালেবান। যদিও তালেবান সরকার প্রকাশ্যে তা অস্বীকার করে আসছে, তবে খাইবার পাখতুনখোয়ার পাহাড়ি এলাকায় টিটিপির ঘাঁটির উপস্থিতি অস্বীকার করার উপায় নেই। এই গোষ্ঠী গেরিলা হামলার মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বড় ক্ষতি করার সক্ষমতা রাখে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ভারত চাইছে পাকিস্তানকে সীমান্তের দুই পাশে চাপের মুখে ফেলতে। আফগানিস্তান সীমান্তে অশান্তি বৃদ্ধি পেলে পাকিস্তান বাধ্য হবে সেনাবাহিনী সেদিকে সরিয়ে নিতে। এর ফলে, কাশ্মীরে বা অন্য কোনো সীমান্তে ভারতের পক্ষে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা ‘এয়ার স্ট্রাইক’ চালানো সহজতর হবে।
যদিও তালেবান সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এমন সম্ভাবনা কম, তবে তারা টিটিপিকে পেছন থেকে উৎসাহ দিতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এতে করে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি নতুন ভারসাম্য তৈরির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যেখানে ভারত কৌশলগতভাবে আফগানিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।