আহমেদাবাদ, ভারত — গুজরাটে সম্প্রতি পরিচালিত ‘অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযানে’ বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী মুসলমান নাগরিককে আটক করেছে রাজ্য পুলিশ। তবে তদন্তে জানা যাচ্ছে, আটককৃতদের অধিকাংশই ভারতের নিজস্ব নাগরিক — মূলত গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশা রাজ্যের বাংলাভাষী মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ের সন্দেহে এসব ব্যক্তিকে আটক করলেও, তাদের অনেকের কাছেই বৈধ ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা, যেখানে জাতিগত ও ভাষাগত পরিচয়ের ভিত্তিতে নির্দোষ নাগরিকদের টার্গেট করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষকে আটক করা হয়েছে এবং মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বুলডোজার অভিযান চালিয়ে বসতভিটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
গুজরাট পুলিশ দাবি করেছে, আটক ব্যক্তিরা নকল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছিলেন। পুলিশ মহাপরিচালক পিটিআইকে জানান, সাড়ে ছয় হাজার ‘অবৈধ অভিবাসী’ আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে ৪৫০ জনকে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে ভারত সরকার এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
আহমেদাবাদের অপরাধ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার শারদ সিংহাল বলেন, “আমরা তথ্য পেয়েছি যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অবৈধভাবে এখানে অবস্থান করছে। এদের অনেকেই ভুয়া আইডি ব্যবহার করছে। আমরা যাচাই করছি তারা আসলে কোথা থেকে এসেছে এবং কখন কখন বাংলাদেশে গিয়েছে।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এটি একটি ‘রাষ্ট্রীয় চক্রে বিভ্রান্তিকর অপারেশন’, যা ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরণের অভিযানে ধর্মীয় পরিচয়কে টার্গেট করা গভীর উদ্বেগের বিষয় এবং এটি নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য শুধুমাত্র আইডেন্টিটি কার্ড থাকা যথেষ্ট হওয়া উচিত। তারপরও যদি নাগরিককে সন্দেহের ভিত্তিতে আটক করা হয়, সেটি আইনের অপব্যবহার।