কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি উভয় পক্ষকে পরিস্থিতির ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করলেও প্রকাশ্যে পাকিস্তানের কোনো সমালোচনা করেনি। ভারত ২২ এপ্রিলের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে ই-মেইলে জানিয়েছেন, “এটি একটি চলমান পরিস্থিতি, যা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা একাধিক পর্যায়ে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছি।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে দায়িত্বশীল সমাধানের পথ অনুসরণের আহ্বান জানায়।”
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, তারা ভারতের পাশে আছে এবং পেহেলগামে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও একই অবস্থান নিয়েছিলেন।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে আফগানিস্তান থেকে ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর পাকিস্তানের কৌশলগত গুরুত্ব কমে গেছে, যদিও দেশটি এখনো ওয়াশিংটনের মিত্র।
দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান জানান, বর্তমানে পাকিস্তানের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেন, যদি ভারত সামরিকভাবে পাল্টা জবাব দেয়, তবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সহানুভূতিশীল থাকতে পারে এবং এতে হস্তক্ষেপ নাও করতে পারে, যা পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
কুগেলম্যান আরও উল্লেখ করেন, ইউক্রেন ও গাজায় চলমান যুদ্ধের পাশাপাশি বৈশ্বিক নানা সংকট সামাল দিতে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। ফলে ভারত-পাকিস্তান সংকটের শুরুর পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে নাও চাইতে পারে।
পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হুসাইন হাক্কানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা কমাতে আগ্রহী নয়। তিনি জানান, ভারত বহুদিন ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্তপারের সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের বিশ্বাস ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়। উভয় দেশের মধ্যে এই ধরনের উত্তেজনা মাঝে মাঝেই দেখা দেয়, এবং এইবার যুক্তরাষ্ট্র তা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না ।