নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু অর্থনীতির পুরোনো সংকটগুলো এখনো কাটেনি। ডলার সংকট, ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ, এবং বাজেটে অর্থ যোগানের টান—এসব সমস্যার মধ্যে দেশের অর্থনীতি রয়েছে চাপে। এই সংকট সামাল দিতে, আগের বছরের মতো চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও বাজেট সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারকে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), এবং কোরিয়ার সঙ্গে দর-কষাকষি প্রায় চূড়ান্ত করেছে। চলতি অর্থবছরে এসব সংস্থার কাছ থেকে সরকার ১২০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে।
তবে সদ্য পদত্যাগী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে চীনের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়ার যে আলাপ হয়েছিল, তা চালিয়ে যাওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আপাতত চীনের সঙ্গে এই আলোচনা নিয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করেছে সরকার।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন, বাজেট সহায়তা সরকারের জন্য একটি ভালো নীতি হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেট সংশোধন করা প্রয়োজন। অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বাজেটের আকার যৌক্তিক করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, এবং কোরিয়ার সঙ্গে বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার, এডিবির কাছ থেকে ৪০ কোটি ডলার, এআইআইবির কাছ থেকে ২০ কোটি ডলার, এবং কোরিয়ার কাছ থেকে ১০ কোটি ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এডিবির সঙ্গে তিন বছরের একটি বাজেট সহায়তা কর্মসূচি চলছে, যার মূল লক্ষ্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এছাড়া, এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য এডিবির সঙ্গে নতুন একটি কর্মসূচির আলোচনা শুরু হয়েছে।
গত পাঁচ বছরে, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ ৮০০ কোটি ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পেয়েছে। এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থাগুলো বাজেট সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে আর্থিক খাতের সংস্কার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, এবং ভর্তুকি ও করছাড় কমানোর মতো বিষয়গুলো।
ইআরডির শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে ১২০ কোটি ডলার পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। আমরা আরও বেশি অর্থ পাওয়ার চেষ্টা করছি।”