পেহেলগাম (কাশ্মীর), ২৫ এপ্রিল:
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন শহর পেহেলগামে সংঘটিত একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে গোটা উপত্যকা। রাজধানী শ্রীনগর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরের এই অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের চালানো হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন একাধিক নিরীহ মানুষ; আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের মধ্যে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। তাদের দাবি অনুযায়ী, কাশ্মীরে বাইরের রাজ্য থেকে আসা নাগরিকদের বসবাস ও কাজের অনুমতি দেওয়ার প্রতিবাদে তারা এই হামলা চালিয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে TRF-এর সরাসরি যোগসাজশ থাকতে পারে।
সরকারি হিসেবে ‘শান্তি ও উন্নয়নের যুগ’ চলমান থাকলেও, এই রক্তক্ষয়ী হামলা কেন্দ্রের দাবি ও বাস্তবতার মাঝে এক বিশাল ফারাক তুলে ধরেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন হামলা নয়, বরং সরকারের দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে জমে ওঠা ক্ষোভেরই একটি প্রতিক্রিয়া।
২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে অঞ্চলটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে মোদি সরকার। সরকারের ভাষায়, এটি ছিল ‘পুনর্গঠন’ প্রক্রিয়া। কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য কথা—কাশ্মীরে সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বেড়েছে কয়েকগুণ, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার হ্রাস পেয়েছে, আর প্রায়শই বন্ধ রাখা হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পেহেলগামের হামলায় মূল লক্ষ্য ছিল শুধু পর্যটক নয়, বরং হিন্দু তীর্থযাত্রীদের আঘাত করে একটি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া। এর ফলে ধর্মীয় উত্তেজনা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আশঙ্কাও জোরালো হয়েছে।
কাশ্মীর ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মোদি সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ আইন নিয়ে আন্দোলন, নাগপুরে আওরঙ্গজেবের সমাধিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মণিপুরের জাতিগত হিংসা, কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের বিক্ষোভ—সবকিছু মিলিয়ে কেন্দ্রের “এক ভাষা, এক জাতি” নীতির বিরুদ্ধে ক্রমশ জমে উঠছে জনরোষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা নতুন করে সহিংসতা ও অস্থিরতা ডেকে আনছে। বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, দেশের ভেতরে ও বাইরে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ এবং ক্ষোভের মুখে মোদি সরকারের নীতি কার্যকরভাবে টিকছে না।
এই হামলা আবারো প্রশ্ন তোলে—ভারতের কেন্দ্র সরকার কি সত্যিই কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম? আর এই ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা কখন গিয়ে থামবে?
তথ্যসূত্র:
The Resistance Front claims responsibility – Facebook Post