করোনাকালের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবে আবারও বিপর্যয়ে পড়েছে ঢাকাই সিনেমা শিল্প। গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) কোনো নতুন সিনেমা মুক্তি পায়নি, এবং পুরোনো কিছু সিনেমা প্রদর্শিত হলেও হলে দর্শকের উপস্থিতি খুবই কম।
নতুন সিনেমার অভাব ও শুটিং বন্ধ
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি, এবং শুটিং কার্যক্রমও বন্ধ। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এবং হলে দর্শকের উপস্থিতি বাড়তে আরও সময় লাগতে পারে। পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর জানান, ২৩ আগস্ট মুক্তির কথা থাকা তাঁর ‘অমানুষ হলো মানুষ’ ছবির মুক্তি পিছিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘অনেক হল ভাঙচুর হয়েছে এবং আতঙ্কে বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এখন ছবিটি মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা অনিশ্চিত।’
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিন সুমন জানান, ‘আমার জানামতে, বর্তমানে কোনো সিনেমার শুটিং চলছে না। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে সিনেমার সংখ্যা কমে গেছে, এবং নতুন সিনেমার শুটিংও পিছিয়েছে।’
হলের দুরবস্থা: অধিকাংশ হল বন্ধ
২৫ জুলাইয়ের পর দেশে নতুন ও পুরোনো সিনেমা মিলিয়ে প্রায় শ খানেক হল চালু ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। রাজধানীর বেশিরভাগ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির হিসাবমতে, মাত্র ২৫টি হল খোলা আছে, তবে সবগুলোতেই দর্শকখরা বিরাজ করছে।
‘তুফান’ সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আই লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ছবিটি মাত্র আটটি একক হল ও মাল্টিপ্লেক্সে চলছে, এবং দর্শকের সংখ্যা নগণ্য।
হল ভাঙচুর ও লুটপাট
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে প্রায় এক ডজন সিনেমা হলে হামলা হয়েছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জের রুটস সিনে ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি হলে ভাঙচুর হয়েছে, যা পুরো হলটিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
সাহায্যের আবেদন
ভাঙচুরের শিকার হলমালিকেরা সরকার থেকে সাহায্য চান। রুটস সিনে ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি হলগুলোর জন্য কিছু অনুদানের ব্যবস্থা করে, তাহলে আমাদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে।’ অন্যথায়, হলগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে না বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকাই সিনেমা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। শিল্পের টিকে থাকার জন্য হলমালিকদের পাশে দাঁড়ানো এবং নতুন সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।