খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রতিবাদে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। রোববার সকালে নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রথম মিছিলের পর দুপুরে আরও তিনটি এলাকায়—সোনাডাঙ্গা থানার মজিদ সরণি, বয়রা মহিলা কলেজ সড়ক এবং দৌলতপুরে ঝটিকা মিছিল করেন তাঁরা।
জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে এই মিছিলগুলো অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে দলটির নেতারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার দাবি করেন। তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এমন কোনো স্মারকলিপি পাননি। হয়তো ফ্রন্ট ডেস্কে কেউ দিয়ে থাকতে পারেন, তবে সে বিষয়েও তাঁর নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।
আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‘প্রহসনমূলক, অসাংবিধানিক ও বেআইনি কার্যক্রমের’ প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচি। স্মারকলিপিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানার স্বাক্ষর রয়েছে বলে জানান দলের এক নেতা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের এ ধরনের আচমকা কর্মসূচিতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা প্রশাসনের নির্লিপ্ততাকে ‘দুর্বলতা ও ব্যর্থতার প্রতিফলন’ বলে আখ্যা দেয়। আহমেদ হামীম ও আবদুল্লাহ চৌধুরী নামের দুই নেতা বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর রাজপথ ছাত্র-জনতার দখলে ছিল, তাই সন্ত্রাসীরা রাস্তায় নামার সাহস পায়নি। এখন প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে তারা আবার রাজপথে নামছে।”
তারা আরও বলেন, “এই নির্লিপ্ততা শুধু প্রশাসনের নয়, বরং গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে।” সংবাদ সম্মেলন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির পাশাপাশি মিছিলে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আহ্বান জানানো হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে খুলনা বিএনপিও। দলটির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “আচমকা নগরীর একাধিক স্থানে আওয়ামী লীগের মিছিলের নেপথ্যে কারা মদদ দিচ্ছে, তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ আবার রাজপথে ফিরে আসছে।”
বিবৃতিতে পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে ‘আওয়ামী দোসর’ চিহ্নিত করার আহ্বান জানানো হয় এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী, মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম, জেলা আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম, ও জেলা সদস্যসচিব আবু হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, “আওয়ামী লীগের এমন কর্মসূচি সম্পর্কে কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। তারা হঠাৎ করেই এই কর্মসূচি নেয়। তবে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে এবং মিছিলকারীদের শনাক্ত করে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”