চট্টগ্রাম, ২১ এপ্রিল:
দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে থাকা চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত বে টার্মিনাল প্রকল্প অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের মাত্র দুই দিন পর, আগামী ২৩ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই মেগা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরো প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক এবং বাকি অর্থায়ন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হবে ব্রেক ওয়াটার। পাশাপাশি, নেভিগেশন এক্সেস চ্যানেল নির্মাণে খরচ হবে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা এবং ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হবে নেভিগেশন যন্ত্রপাতি। এছাড়া রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানান, “বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির পরপরই প্রকল্পের বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে টার্মিনাল ভিত্তিক চুক্তিও সম্পন্ন করা হবে।”
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পরই যুক্ত হবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটি (PSA) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড। এ দুই সংস্থা যৌথভাবে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগে গড়ে তুলবে দুটি আধুনিক টার্মিনাল। প্রতিটি টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ১ হাজার ২২৫ মিটার। অন্যদিকে, বন্দরের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি হবে সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বে টার্মিনাল চালু হলে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ চলাচল অনেকাংশেই জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাগর উপকূলে অবস্থিত বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ প্রবেশ ও প্রস্থান করতে পারবে, যা সময় ও খরচ উভয়ই কমাবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, “বে টার্মিনাল চালু হলে বড় মাদার ভ্যাসেলগুলো সহজে নোঙর করতে পারবে, এতে কনটেইনার মুভমেন্ট অনেক গুণ বাড়বে।”
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডল করতে সক্ষম হলেও বে টার্মিনাল চালু হলে সেটি বাড়বে ৫০ লাখে। এছাড়া ১২ মিটার ড্রাফটের ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজও চলাচল করতে পারবে নতুন টার্মিনালে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, “আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনায় নিয়েই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে ২০২৬ সালে টার্মিনাল চালুর লক্ষ্য থাকলেও সাম্প্রতিক সময়সীমা অনুযায়ী ২০২৯ সালে পুরোপুরি অপারেশনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।