ঢাকা, ২১ এপ্রিল ২০২৫ — বাংলাদেশে চলমান ও প্রস্তাবিত প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়ন ও নির্মাণ কার্যক্রম স্থগিত করেছে ভারত। ভারতীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তা’ এবং ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা’র কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনায় বড় ধরণের বিঘ্ন ঘটেছে।
ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশে যে তিনটি বড় রেল প্রকল্প চলছিল, তার মধ্যে রয়েছে:
1. আখাউড়া-আগরতলা (ত্রিপুরা) ক্রস-বর্ডার রেল সংযোগ:
৪০০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ১২.২৪ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৬.৭৮ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে এবং ৫.৪৬ কিলোমিটার ত্রিপুরা অংশে অবস্থিত।
2. খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন:
ভারতীয় কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটে নির্মিত এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৩,৩০০ কোটি রুপি। ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ রেললাইনটি খুলনা ও মোংলা বন্দরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করত।
3. ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ:
১,৬০০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পটি ২০২৭ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থ ছাড়ে জটিলতা প্রকল্পের অগ্রগতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাছাড়া, পাঁচটি সম্ভাব্য নতুন সংযোগের স্থল জরিপের কাজও বর্তমানে স্থগিত করা হয়েছে।
পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা কমিয়ে উত্তর ভারতের রেল অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। দ্য হিন্দু জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে রেললাইন দ্বিগুণ থেকে চারগুণ করার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে ভারতীয় রেল। পাশাপাশি বিকল্প সংযোগ হিসেবে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সংযুক্তির পরিকল্পনাও গুরুত্ব পাচ্ছে।
নতুন পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:
নেপাল-ভারত সংযোগ: বিরাটনগর-নিউ মাল (১৯০ কিমি) এবং গালগালিয়া-ভদ্রপুর নতুন রেললাইন নির্মাণ পরিকল্পনা।
পশ্চিমবঙ্গ সংযোগ: শিলিগুড়ি করিডরকে সহায়ক করতে কুমেডপুর-আম্বারি ফালাকাটা অংশে ১৭০ কিমি ও বিহার-পশ্চিমবঙ্গ সংযোগে ২৫ কিমি নতুন রেললাইন স্থাপন পরিকল্পনা।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের আঞ্চলিক বাণিজ্য ও রেলযোগাযোগ কৌশলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও প্রকল্পে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্মকর্তারা।