রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলে হস্তক্ষেপ: যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচ সদস্য আটক
রাজধানী ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারিতে আজ রোববার ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে যুবলীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী ও শাহবাগ এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আটক পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন:
- মো. হারুনুর রশিদ (৫৫) – ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি
- মো. জাহিদুর ইসলাম – যাত্রাবাড়ী থানা ৫০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
- মো. জনি (২৮) – ছাত্রলীগ কর্মী
- মো. বিল্লাল (২৩) – ছাত্রলীগ কর্মী
- মো. করিম (৪০) – যুবলীগ কর্মী
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল পৌনে সাতটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মৃধাবাড়ি এলাকায় যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের অন্তত ১৬ থেকে ১৭ জনের একটি দল হঠাৎ ঝটিকা মিছিল বের করে। পুলিশ টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় মো. হারুনুর রশিদ ও মো. জাহিদুর ইসলামকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়।
অন্যদিকে শাহবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোর ছয়টার দিকে শাহবাগ মোড়ে যুবলীগ এবং নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ২০ থেকে ৩০ জন কর্মী একটি ঝটিকা মিছিল করার পরিকল্পনা করে। পুলিশ তাদের আগে থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল। টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা পালানোর চেষ্টা করে। সেখান থেকে মো. করিম ও মো. জনিকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তিরা পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মাধ্যমে রাজধানীতে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিলেন। তাঁরা সংঘবদ্ধভাবে ঝটিকা মিছিলে অংশ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিলেন এবং তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি হয়ে উঠছিল।
ডিএমপি’র মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা বা জনমনে ভীতি সৃষ্টির অপচেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি দলের একাংশ বলছে, “দলীয় পরিচয়ের আড়ালে কেউ যদি রাষ্ট্রবিরোধী বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে।” অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সরকার বিরোধী কণ্ঠস্বর দমনে পুলিশি অভিযান পরিচালনা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানীতে এই ধরনের হঠাৎ মিছিল বা প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করে জনমনে অস্থিরতা ছড়ানো হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে একটি সুসংগঠিত গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে এসব ঝটিকা কর্মসূচি একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যেকোনো ধরনের হঠাৎ জমায়েত বা মিছিল জননিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাই পুলিশ আগে থেকেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে।
রাজধানীতে আগেও বিভিন্ন সময়ে এমন ঝটিকা মিছিল ও হঠাৎ প্রতিবাদ কর্মসূচি লক্ষ্য করা গেছে, যার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত নজরদারি বাড়িয়েছে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছে।
ডিএমপি সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে আপস করা হবে না। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেকোনো ধরনের বৈধ-অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির যে প্রচেষ্টা, তা রোধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক পরিচয় যা-ই হোক, আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দেশের স্বাভাবিক চলাচল ও জননিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ ও প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করছেন সাধারণ নাগরিকেরা।