ঢাকা, ২০ এপ্রিল:
সাবেক ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ খেতাবজয়ী মডেল মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি এক সৌদি কূটনীতিকের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছেন। এ ঘটনায় রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার বাদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমির ও আরও দুই-তিনজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে, সম্পর্ক স্থাপন করে, পরে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতেন।
প্রতারণার মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত দেওয়ান সমির ‘কাওয়াই গ্রুপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং ‘সানজানা ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুন্দরী ও স্মার্ট নারীদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হতো।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে দাবি করেন, এই চক্রটি অভিনব কৌশলে বিদেশি দূতাবাস কর্মীদের ফাঁদে ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল। তাদের সর্বশেষ টার্গেট ছিলেন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা। অভিযোগ রয়েছে, তার কাছ থেকেই মেঘনা ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন।
মডেল মেঘনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি আবেদন করলে তা বৃহস্পতিবার মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
শুনানির সময় মেঘনা নিজেই নিজের পক্ষে কথা বলেন। তিনি আদালতে বলেন, “আমার নাম মেঘনা, মেঘলা নয়। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কথা বলা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো—চাইলেই কি কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারে? আমার সঙ্গে ঈসার বিয়ে হয়েছে। তার সঙ্গে আমার একমাত্র সম্পর্ক ছিল।”
মেঘনা আরও দাবি করেন, তাকে বিনা বিচারে আটক করা হয়েছে এবং জানানো হয়েছে, তিনি কোনো আইনজীবী পাবেন না। তিনি বলেন, “ঈসা অভিযোগ করেছেন আমি তার সন্তান নষ্ট করে দিয়েছি, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
আসামি সমির দেওয়ান আদালতে বলেন, “আমাকে মেঘনার বয়ফ্রেন্ড বলা হচ্ছে, যা সত্য নয়। আমি একজন সাধারণ মানুষ ও রেমিটেন্স যোদ্ধা। মামলার কিছুই আমি জানি না।”
উল্লেখ্য, সমিরকে ভাটারা থানায় করা একটি চাঁদাবাজির মামলায় গত ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। একই মামলায় এখন মেঘনাকেও গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মেঘনা বলেন, “একমাত্র ঈসার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল, কারো সঙ্গে না। আমি ন্যায়বিচার পাচ্ছি না।” এরপর পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘিরে হাজতখানায় নিয়ে যান।
২০২০ সালের ৫ অক্টোবর ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন মেঘনা আলম। গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ। আটক হওয়ার আগে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, “পুলিশ পরিচয়ধারীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে।” ওই ১২ মিনিটের লাইভ দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যদিও তা পরবর্তীতে তার অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেওয়া হয়।