সংবাদ প্রতিবেদন:
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিনের তরুণ ফটোসাংবাদিক ফাতিমা হাসুনা। মাত্র ২৫ বছর বয়সী এই সাহসী চিত্রসাংবাদিক নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী যেন নিজেই করেছিলেন কিছুদিন আগেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাতিমা লিখেছিলেন— “আমি যদি মারা যাই, তাহলে ইচ্ছা শুধু এটাই যে আমার মৃত্যু যেন হয় কোলাহলপূর্ণ। আমি শুধু সংবাদের শিরোনাম বা একটি সংখ্যা হতে চাই না। চাই এমন এক মৃত্যু, যা বিশ্ব শুনবে; এমন এক প্রভাব, যা সময়ের সাথে রয়ে যাবে।”
তাঁর সেই কথাই যেন সত্যি হয়ে গেল।
গত ১৬ এপ্রিল, নিজের বিয়ের মাত্র কয়েক দিন আগে, উত্তর গাজার নিজ বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন ফাতিমা। একই হামলায় প্রাণ হারান তাঁর গর্ভবতী বোনসহ পরিবারের আরও ১০ সদস্য। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, এই হামলার লক্ষ্য ছিলেন হামাসের এক সদস্য, যিনি বেসামরিক নাগরিক ও ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন।
ফাতিমা ছিলেন গাজায় ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ চোখ। তিনি শুধু ছবি তুলতেন না, তাঁর তোলা প্রতিটি ফ্রেম ছিল গাজার মানুষের জীবন-সংগ্রাম, বেদনা আর বাস্তবতার নীরব সাক্ষী।
মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে ঘোষণা আসে, কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে ফাতিমার জীবনের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র। ইরানি পরিচালক সেপিদেহ ফারসি নির্মিত ‘Put Your Soul on Your Hand and Walk’ নামের এই ডকুমেন্টারিতে রয়েছে ফাতিমা ও ফারসির ভিডিও কথোপকথনের ভেতর দিয়ে গাজার মানুষের দুঃখ-কষ্টের বাস্তব চিত্র।
ফারসি বলেন, “ফাতিমা হয়ে উঠেছিল গাজায় আমার একমাত্র চোখ। সে ছিল প্রাণবন্ত, সাহসী, আশাবাদী—এক উজ্জ্বল আলো। তার চোখ দিয়ে আমি গাজার মানুষগুলোকে দেখতাম। আজ আমি সেই আলো হারালাম।”
এই সংবাদ শুধু ফাতিমার মৃত্যু নয়, বরং এক প্রতীকী প্রতিবাদের গল্প—যেখানে সত্য ও ন্যায়ের খোঁজে নিজের জীবনও উৎসর্গ করেছেন একজন তরুণ সাংবাদিক।
উল্লেখ্য, চলমান গাজা-ইসরায়েল সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক।