ঢাকা: বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে চাপে ফেলতে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন দেশের পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে তারা মনে করছেন, এ সংকট সাময়িক এবং দ্রুতই নতুন সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিমানবন্দর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে খরচ পড়ে ৩ ডলার ১০ সেন্ট, যা পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। অথচ সরাসরি ঢাকা থেকে বিমানে পাঠালে খরচ হয় ৪ ডলার ৬৫ সেন্ট থেকে ৫ ডলার ২০ সেন্ট, তবে সময় লাগে মাত্র ৬ থেকে ৮ দিন। ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্টের কারণে খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী এ পথ বেছে নিয়েছিলেন।
বিজিএমইএ-এর সাবেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রোডাকশন ঠিকমতো করতে পারি না, কারণ কাঁচামাল আমদানির পর নির্দিষ্ট লিড টাইমের মধ্যে এক্সপোর্ট করতে হয়। সময় বাঁচাতে আমাদের এয়ার কার্গোতেই পণ্য পাঠাতে হয়।’
মূলত ভারতের কার্গো বিমানের খালি স্পেসে পণ্য পাঠাতেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ভারত জানিয়েছে, কার্গো জটের কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এ যুক্তি মানতে নারাজ।
ক্লিফটন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘হঠাৎ করে এভাবে বাতিল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে আমরা বৈরি পরিবেশে পড়েছি। কাস্টমারদের কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছে দেওয়া, বিকল্প রুট নির্বাচন—সব মিলিয়ে আমরা চাপে পড়েছি।’
ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সংকট মোকাবেলায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে পূর্ণাঙ্গ কার্গো সুবিধা চালু করা জরুরি। একই সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকান রুটে চলাচলকারী বিদেশি কার্গো বিমান সংস্থাগুলোর জন্য বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘এখন আমাদের সরকারের উচিত ভারতের ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো এবং দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য সহজ ব্যবসার সুযোগ তৈরি করা।’
কিছু ব্যবসায়ী এই সংকটকে সম্ভাবনা হিসেবেও দেখছেন। তারা বলছেন, ইউরোপ ও আমেরিকায় যাত্রীবাহী বিমানে পণ্য পাঠাতে খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও সরাসরি কার্গো বিমান চালু হলে খরচ কমবে।
আরডিএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা সারোয়ার রিয়াদ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যদি পোল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় ফ্রি কান্ট্রিতে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চালু করা যায় অথবা ইউএসএ-তে ক্যাথে প্যাসিফিক বা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ডিরেক্ট সার্ভিস চালু করা যায়, তাহলে সমস্যা কমে যাবে।’
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে বাংলাদেশ গার্মেন্টস রফতানি করেছে ২৬.৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৬.১৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ১৫ মাসে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে রফতানি হয়েছে প্রায় ৫,৬৪০ কোটি টাকা মূল্যের ৩৫ হাজার মেট্রিক টন পণ্য।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, গত চার দশকে গার্মেন্টস শিল্প অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে আছে। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের সিদ্ধান্তও সাময়িক সংকট তৈরি করলেও এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।