নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মর্মান্তিক ট্রিপল মার্ডার কাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা বটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে স্থানীয় একটি পুকুর থেকে বটিটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে একই পুকুর থেকে রক্তমাখা জামাকাপড়ে ভর্তি একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছিল। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম জানান, গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ইয়াছিন একাই তার স্ত্রী লামিয়া আক্তার, ৪ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ লাবীব এবং শ্যালিকা স্বপ্না আক্তারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন। নিহতরা মিজমিজি পুকুরপাড় এলাকার আক্তার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ইয়াছিন স্ত্রী লামিয়ার বাসায় যান। সেখানে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এ সময় মানসিকভাবে অসুস্থ লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তার বটি নিয়ে ইয়াছিনের দিকে তেড়ে আসেন। আত্মরক্ষার নামে ইয়াছিন তার হাত থেকে বটি ছিনিয়ে নিয়ে প্রথমে লামিয়ার গলায় কোপ দেন, যার ফলে তার মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরে স্বপ্না চিৎকার করলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করেন ইয়াছিন। এরপর শিশু আব্দুল্লাহকে গলায় থাকা তাবিজের সুতা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ইয়াছিন লাশ তিনটি বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের একটি রাস্তায় ইট ও সুরকির নিচে চাপা দেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি ও রক্তমাখা জামাকাপড় স্থানীয় পুকুরে ফেলে দেন তিনি।
১১ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে রাস্তার পাশ থেকে বস্তাবন্দি লাশ তিনটি উদ্ধার করে পুলিশ এবং একই দিন ইয়াছিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালতে উপস্থাপন করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ইয়াছিন স্বীকার করেন, তিনি একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ইয়াছিন মাদকের টাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করতেন। তার বিরুদ্ধে সৎ মায়ের দায়ের করা ভাঙচুরের মামলায় ২৭ রমজানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ঈদের দুই দিন আগে জামিনে মুক্তি পান।
পুলিশের ধারণা, ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন ইয়াছিন। হত্যার পরও তিনি নিহতদের বাসায় স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করছিলেন এবং প্রায়ই লাশ চাপা দেওয়া স্থানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন।